খুঁজি আমি, আমি খুঁজি সেই বাংলা
রুপময় সুজলা-সুফলা, শস্য- শ্যামলা;
সৌন্দর্য, মুগ্ধতা আার ঐশ্বর্য লালসা
ফুরায় না, যত দেখি তত বাড়ে ভালবাসা।
খুঁজি আমি, আমি খুঁজি কবি গুরু
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মনকাড়া ষড়ঋতু
ছন্দময়, ঋতুরঙ্গময়ী রূপসি বাংলার মিতু।
রূপের খেলা, রঙের খেলা, সুরের খেলা
রূপমুগ্ধ পুলকিত কবির আবেগ মেলা।
রূপের ঐশ্বর্যে কানায় কানায় হয় পূর্ণ
মনোহরী পথ-প্রান্তর, আমি ধন্য, আমি ধন্য।

খুঁজি আমি, আমি খুঁজি সেই বাংলা
গ্রীষ্ম প্রকৃতি ফল দিয়ে সাজায় ডালা।
ফলের সমাহার  জাম, জামরুল,
আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, আমরুল।
রঙ্গীন গোলাপ, বকুল, বেলি, টগর, জবা
পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের মেলার সভা।
কঠিন হাতে মারে ছুঁড়ে নির্দয় নিদাঘ-সূর্য
নিদারুণ খরতপ্ত প্রখর তাপদাহ অগ্নিবাণ তূর্য।
ধরিত্রীর বক্ষ বিদীর্ণ চৌচির তৃষ্ণার্ত প্রান্তর
আকণ্ঠ আকাশের করুণা ভিক্ষায় ফাটে অন্তর।

খুঁজি আমি, আমি খুঁজি
কবি সুফিয়া কামালের বর্ষার আগমনি বার্তা
“আমি বর্ষা, আসিলাম গ্রীষ্মের প্রদাহ শেষ করি
মায়ার কাজল চোখে, মমতায় বর্মপুট ভরি।”
পিপাসার্ত গ্রীষ্ম বিদায় তৃষ্ণা নিবারণ বর্ষায়
দূর-দিগন্তে ধূসর আকাশে নবীন মেঘের ধায়।
নয়নাভিরাম বর্ষা, মুহুর্মুহু বিদ্যুৎ ও গুরুগম্ভীর
বজ্রনিনাদের ‘অতি-ভৈরব হরষে’র সম্ভীর।
পৃথিবীর ধূসর বুকে স্নিগ্ধ-শীতল ছায়াঘন দিন
নিবিড়-কালা মেঘরাজির আনাগোনায় আসে নিন।
বন-প্রকৃতির বুকে মেঘমেদুর ছায়া-বিস্তারে বর্ষা
দুষ্ট ছেলেদের কর্দমাক্ত দেহে মায়ের কষা।
প্রকৃতির শোঁ-শোঁ শব্দ শীতল ধারা-বর্ষণ
সংগীতমুখর সুধাকণ্ঠ পাখির কল-কূজন।
মাটির ভেদ করে নবীন শস্য-শিশুর দল
নবজীবনের জয়যাত্রায় আবার করে ছলছল।
বর্ষায় নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুর-ডোবা
হেলেঞ্চা, কলমিলতা আর শাপলার শোভা।
বর্ষাকালে কেয়া, কদম, কামিনী, জুঁই
গন্ধরাজ প্রভৃতি ফুলের সুগন্ধি সুই।
ডুবে ফসলমাঠ, বস্তি, ভেঙে পড়ে কাঁচা ঘরবাড়ি
ঘরে ঘরে শুরু হয় পেটের পীড়া আর জ্বরজারি।
বর্ষার অঢেল দান কিঞ্চিত কষ্টের স্মৃতি আদল
আকাশে বেজে ওঠে বর্ষা বিদায়ের বিষন্ন মাদল।

খুঁজি আমি, আমি খুঁজি সেই বাংলা
অপূর্ব শোভা ধারণ আবির্ভূত শরৎ ঋতু রানী
বর্ষণ-ক্ষান্ত লঘুভার মেঘ অলস-মন্থর ছন্দে বাণী।
সুনীল রূপ-কান্তি, বর্ষণ-ধৌত, মেঘমুক্ত আকাশ
শিউলি ফুলের মন-উদাস-করা শোভিত বাতাস।
গন্ধ, নদীতীর কাশফুল অপূর্ব শুভ্র সমাহার
তৃণ-পল্লব নব-শিশির আলিপন হালকা শিক্ত পাহাড়।

খুঁজি আমি, আমি খুঁজি সেই বাংলা
বঙ্গ- উদাসীন, পৌঢ়, শরত বিলম্বিত হেমন্ত বিষন্ন
বনৈশ্বর্য, রূপসি ধূসর কুয়াশা নয়ন ফসলে নিমগ্ন।
ক্ষেতে-খামারে রাশি রাশি ভারা ভারা সোনার ধান
ঘরে ঘরে চলছে নবান্ন উৎসব বিধাতা রেখেছে মান।

খুঁজি আমি, আমি খুঁজি সেই বাংলা
পত্রপল্লব শুষ্ক কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে শীত
শীতের মহিমায় কবি আপ্ল‍ুত হয়ে গিয়েছেন গীত।
জীর্ণ পত্র ক্রমশ হলুদ ঝরে পড়া বিষন্নতার সুর
কুয়াশা ঢাকা মিষ্টি সকাল মানব হৃদয়ের ফুর।
কপি, মুলা, বেগুন, পালংশাক, তাল, খেজুর রস
মটরশুটি সূর্যমুখী কমলালেবু, বরই, শীতের বস।
ঘরে ঘরে ভাপা, চিতই, পাটিসাপটা, পিঠাপুলি
শীত বিদায় বসন্তের সম্ভাষণ কোকিলের বুলি।


খুঁজি আমি, আমি খুঁজি সেই বাংলা
রুপশিল্পী ঋতুশ্রেষ্ঠ বসন্ত, পুরতির পরম লগ্ন
মৃদু-মন্দ দখিনা বাতাস স্পর্শ বর্ণ-বিরল ভগ্ন ।
বন-বীথির রিক্ত, অপূর্ব পুলক-প্রবাহ, মর্মর-ধ্বনি
শিমুল-কৃষ্ণচূড়ার উচ্ছল বিকশিত মঞ্জরির অবনি।