কবিতার ছন্দ মাত্রা অন্ত্যমিল,
ঠিক না হলে কি কবিতা হবেনা?
(পর্ব ১)
মোঃ মাসুদার রহমান মাসুদ
তারিখ ১২/০১/২০২৪/
আজ আমার কবিতা বিষয়ক একটি প্রশ্ন হৃদয়ে ভীষণ ভাবে পীড়া দিয়ে উঠলো,
কবিরা কি আজ কবিতার বিরুদ্ধাচরণ করে?
না কবিরা এককভাবে কবিতার জগতে রাজত্ব কায়েম করে যাবে?
আমার এ বাক্যটি শুনে হয়তো অনেকে অবাক হলেন, তবে আমার বড় দুঃখ হয় যখন কোন নূতন কবি পুরাতন কবির নিকট শরণাপন্ন হয়, একটি কবিতা দেখার জন্য, তখন পুরাতন কবি নূতন কবির কবিতাটি দেখে বলে এটা কবিতা হয় নাই, এ কবিতার মাঝে ছন্দ-মাত্রা ঠিক নাই, অন্ত্যমিল নাই, অলংকার নাই, অনুপ্রাস নাই, গঠন কাঠামো ঠিক নাই, সহজ সরল কিছু শব্দ এবং পর্ব, এটা কোন কবিতা হলো? এটা কোন কবিতা হয় নাই, বলেন-তো তখন ঐ নূতন কবির কি অবস্থা হয়?
এখন আমার ঐ পুরাতন কবির প্রতি প্রশ্ন, ছন্দ মাত্রা অন্ত্যমিল অনুপ্রাস অলংকার ঠিক হলেই কি কবিতা? আর এসব ঠিক না হলে কি কবিতা নয়? আবার আমার ঐ পুরাতন কবির নিকট জানতে ইচ্ছে হচ্ছে, কবিতা কি? কবিতা কাকে বলে? যদিও আমার এ প্রশ্নটি করা ঠিক হলো না, কারণ প্রত্যেকটি কবি, কবিতা কি? কবিতা কাকে বলে? কবিতার সংজ্ঞা কি? এর কিছু না কিছু জেনে কবিতা লিখে, তবুও প্রশ্নটি করলাম ঐ সকল পুরাতন কবিদের প্রতি, যারা কবিতায় ছন্দ মাত্রা অন্ত্যমিলের বেশি পারদর্শী হওয়ার কারণে, তারা গর্বের মোহে মত্ত হয়ে গেছে, তাদের অহংকারের কারণে, তাদের দাম্ভিকতার কারণে, তাদের হঠকারিতার কারণে, মনে হয় তারাই শুধু কবিতা রচনা করতে পারে, আর কেউ কবিতা রচনা করতে পারেনা, তাই সেই সকল কবিদের প্রতি আমার এ আক্ষেপটি ছুড়ে দিলাম, অশিষ্ট আচরণ হলে ক্ষমা করে দিবেন, আমি সকলের মঙ্গল কামনা করি ।
আমি যতটুকু কবিতা বিষয়ক অধ্যয়ন করে জ্ঞান অর্জন করেছি, সে আলোকে বলতে পারি, একজন কবির আবেগ অনুভূতি চিন্তা ভাবনা ও গভীর উপলব্ধি ও পারস্পরিক বাক্যের উচ্চারণ সুরেলা এবং শ্রুতিমধুর ভাবে উচ্চারিত হওয়াকে অথবা লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়াকে কবিতা বলে ৷
অথবা অন্যভাবে বলতে গেলে, প্রত্যেকটি মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য হৃদয়ের মধ্যে তীব্র আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়, সেই মনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা যদি ছন্দে-ছন্দে, তালে-তালে, সুরে-সুরে, মৌলিক বিষয়গুলো সংক্ষিপ্ত আকারে উচ্চারিত হওয়াকে অথবা লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়াকে কবিতা বলে ৷
এটি হলো কবিতার মূল সংজ্ঞা, তবে আমাদের বিজ্ঞ কবি মহোদয়গণ কবিতা লেখার কিছু নিয়ম কানুন কাঠামো আবিষ্কার করে দিয়েছে, সে বিষয়গুলো নিয়ে কিছু আলোচনা করলে আমাদের কবিতা বিষয়ক অনেক জড়তা এবং কবিতা বিষয়ক অনেক ভ্রান্ত ধারণা অনেকাংশ দূরীভূত হয়ে যাবে ৷
আজকাল আমরা কবিতার মাঝে যে, বিভিন্ন নামের কবিতা দেখতে পাই, যেমন অক্ষরবৃত্ত ছন্দের কবিতা, মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতা, স্বরবৃত্ত ছন্দের কবিতা, এ নামগুলো আপনাদের মতো পূর্বেকার বিজ্ঞ কবিদের দেওয়া নাম, এ নামগুলো কোন ব্যাকরণ থেকে আসে নাই অথবা কোন সংস্কৃত শব্দ থেকে আসে নাই, এ নামগুলো পূর্বেকার বিজ্ঞ কবি মহোদয়গণ আবিষ্কার করেছে, এবং তারা সে নাম অনুযায়ী একটি নিয়ম কাঠামো বেধে দিয়েছে, এবং সে নিয়ম কাঠামো অনুযায়ী তারা কবিতা রচনা করেছে, আর যে সকল কবি তাদেরকে অনুসরণ করেছে তারাও সে নিয়ম অনুযায়ী কবিতা রচনা করেছে, এভাবে যুগে-যুগে কালে-কালে কবিতার ছন্দের বিস্তার লাভ করেছে, কবিতার ছন্দ কোন ঈশ্বর প্রদত্ত নাম নয়, কবিতার ছন্দ কোন ব্যাকরণ প্রদত্ত নাম নয়, কবিতার ছন্দ কোন সংস্কৃত শব্দের নাম নয়, যা পরিবর্তন করে কবিতা লেখা যাবে না, যা পরিবর্তন করে কবিতা লিখলে কবিতা হবেনা, এ ছন্দগুলো হলো কবিতা লেখার জন্য কবিদের আবিষ্কৃত ছন্দের নাম, আবার যুগে যুগে কালে কালে কবিতা লেখার এ ছন্দগুলোর নামও পরিবর্তন পরিবর্ধন সংস্করণ হয়ে আসছে, অনেক কবি এ ছন্দগুলোর নাম ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দিয়েছে ।
যেমন অক্ষরবৃত্ত ছন্দ এর নাম আরও অনেক আছে যেমন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাম দিয়েছে পয়ার জাতীয় ছন্দ, অথবা সাধু বাংলার ছন্দ, প্রবোধচন্দ্র সেন আরও অনেক নাম দিয়েছে বিশিষ্ট কলামাত্রিক ছন্দ, জটিলকলাবৃত্ত ছন্দ, মিশ্রকলাবৃত্ত ছন্দ, আবার অনেকে তানপ্রধান ছন্দ নামেও অভিহিত করছে ৷
স্বরবৃত্ত ছন্দের নাম অনেকে অনেক ভাবে অবিহিত করছে যেমন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাম দিয়েছে বাংলা প্রাকৃত ছন্দ, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত নাম দিয়েছে চিত্রা ছন্দ, আবার বলতেন শব্দ পাপড়ি ছন্দ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় নাম দিয়েছে মাত্রিক ছন্দ, প্রবোধচন্দ্র সেন নাম দিয়েছে দলাবৃত্ত ছন্দ, মুখোপাধ্যায় নাম দিয়েছে শ্বাসাঘাতপ্রধান ছন্দ ৷
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের নাম অনেকে অনেক নাম দিয়েছে যেমন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাম দিয়েছে সংস্কৃতভাঙা ছন্দ, মোহিতলাল মজুমদার নাম দিয়েছে সাধুভাষার পর্বভূমক ছন্দ, প্রবোধচন্দ্র সেন নাম দিয়েছে কলাবৃত্ত ছন্দ, সরলকলামাত্রিক ছন্দ ৷
তাই কবিরা যেহেতু কবিতা লেখার জন্য অনেক ছন্দ আবিষ্কার করেছে, যুগে যুগে কালে কালে অনেক ছন্দ হারিয়েও গেছে, অনেক ছন্দের নাম পরিবর্তন পরিবর্ধন সংস্করণও হয়েছে, তাই পরিশেষে কালের বিবর্তনে পর্যায় ক্রমে কবিরা যে ছন্দগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে, যে ছন্দগুলোকে বেশি গ্রহণ করেছে, যে ছন্দগুলো দিয়ে কবিরা বেশি বেশি কবিতা রচনা করেছে, যে ছন্দগুলো ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে, ব্যাকরণ সে ছন্দগুলোকে তার পাতায় স্থান দিয়েছে ৷
বাকি অংশ পরের পর্বে । (ইনশাআল্লাহ)