অলকানন্দা,
তোমার চোখের গভীরতায় ডুবে যাওয়া যেন
এক চিরকালীন যাত্রা।
যেখানে সময় থমকে থাকে
শব্দ নিঃশব্দ হয়ে যায়।
তুমি যখন তাকাও,
মনে হয় আকাশের সমস্ত নক্ষত্র
একসঙ্গে ঝরে পড়ে আমার হৃদয়ে।
তোমার চোখের তারা হয়ে ওঠে
আমার রাতজাগা স্বপ্নের অনবদ্য সঙ্গী।

তুমি কি জানো, তোমার স্পর্শহীন স্পর্শ
কীভাবে আমার সমস্ত অস্তিত্ব ছুঁয়ে যায়?
তোমার অনুপস্থিতিও যেন এক অলৌকিক উপস্থিতি,
যে শূন্যতার মধ্যেও পূর্ণতা খুঁজে পাই,
তোমার না থাকা যেন আরও বেশি করে তোমার হয়ে থাকা।

তুমি নদীর মতো বইতে থাকো আমার অনুভূতির উপত্যকায়,
তোমার প্রতিটি হাসিতে মিশে থাকে বসন্তের সমীরণ,
তোমার প্রতিটি কথায় ফুটে ওঠে অরণ্যের নির্মল সবুজ।
তুমি যখন কথা বলো,
মনে হয় স্নিগ্ধ শিশির ভিজিয়ে দিচ্ছে সকালবেলার কুয়াশা।

অলকানন্দা,
তোমার কণ্ঠস্বরের সুরে এক অদ্ভুত মায়া আছে,
যা দুঃখকে সঙ্গীত বানিয়ে তোলে,
যা কান্নার মাঝে এক অনাবিল প্রশান্তি এনে দেয়।
তুমি যখন কথা বলো,
তখন মনে হয় পৃথিবীর সমস্ত বেদনা থেমে গেছে,
তোমার শব্দেরা হয়ে উঠেছে এক অফুরান শান্তির স্রোত।

তুমি কি জানো অলকানন্দা,
তোমার চিবুকের কাছে ঝুলে থাকা
এক চিলতে চুলের আঁচলে
আমি বন্দি হয়ে থাকতে চাই সারাটি জীবন?
তোমার হাসির মাঝে যে আলো খেলা করে,
সেই আলোয় আমি পথ খুঁজে পাই অন্ধকারে।

তুমি যখন অভিমান করো,
তখন মনে হয় আকাশের রং বদলে যাচ্ছে,
গোধূলির আলো নিভে গিয়ে নেমে আসছে এক ধূসর বিষণ্ণতা।
তোমার অভিমানের ভার বইতে পারি না,
তোমার নীরবতার শব্দ আমার ভেতরে ঝড় তোলে।

তুমি কি বুঝতে পারো, অলকানন্দা,
তোমার অনুপস্থিতিরও একটা সুর আছে?
একটা ছন্দ আছে, যা আমার দিনগুলোকে
এক বিষাদমাখা সঙ্গীত বানিয়ে দেয়।
তুমি যখন থাকো না,
তখন বাতাস ভারী হয়ে যায়,
সূর্য অস্ত যায় অন্যরকম রঙে,
আমার চারপাশের সবকিছু যেন
এক অদ্ভুত শূন্যতার আবরণে মোড়ানো হয়ে যায়।

তুমি কি জানো, তোমার নামটাও এক কবিতা?
একটা নদীর মতো বয়ে চলে আমার বুকের গভীরে,
তোমার নামের প্রতিটি অক্ষর এক-একটি প্রেমের গল্প।

তুমি আমার কাছে ধ্রুবতারার মতো—
যে পথ দেখায়, কিন্তু ধরা দেয় না,
যে আলোর উৎস, কিন্তু নিজে কখনো নিভে যায় না।
তুমি আমার কাছে সৃষ্টির সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য,
তোমার চোখের জলও আমার কাছে এক অফুরন্ত সমুদ্রের গান।

অলকানন্দা,
আমি তোমাকে ভালোবাসি, যেমন নদী ভালোবাসে সাগরকে,
যেমন আকাশ ভালোবাসে তার গোধূলির নরম আলোকে।
আমি তোমাকে ভালোবাসি, যেমন বৃক্ষ ভালোবাসে তার পাতার শিরাগুলোকে,
যেমন সকাল ভালোবাসে শিশিরের স্নিগ্ধ স্পর্শকে।

অলকানন্দা,
তুমি কি শুনতে পাচ্ছো
এই হৃদয়ের অনুনয়?
এই বৃষ্টিভেজা ভালোবাসার কবিতা?
তুমি কি বুঝতে পারো—
তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর গল্প,
একটা এমন গল্প, যার কোনো সমাপ্তি নেই?