একদিন আমার জন্যও প্রস্তুত থাকবে একখানা খাটিয়া।
কাঠের তৈরি, মোটা গজারির গন্ধ লেগে থাকা,
পড়েছিলো কোনো এক কোণে নীরব হয়ে,
অপেক্ষায় ছিল, কখন আমার পালা আসবে!
এই খাটিয়া নতুন নয়,
এটা কতজনকে যে বহন করেছে,
কতজনকে যে নিয়ে গেছে মাটির কাছে,
তার কোনো হিসেব নেই!
আজ আমার পালা!
আমার গায়ে কাফনের কাপড়,
চারপাশে ঘিরে থাকা চেনা-অচেনা মুখ,
কেউ আমাকে ছুঁয়ে দেখছে, কেউ কাঁদছে নীরবে,
কেউ আবার তাকিয়ে আছে স্থির দৃষ্টিতে,
কারণ আমার চলে যাওয়ার সত্যিটা সবার কাছে স্পষ্ট।
আমার খাটিয়া এক কোণ থেকে টেনে আনা হলো।
ওর কাঠের গায়ে লেগে থাকা ধুলো উড়ে উঠলো বাতাসে,
একজন হাত বুলিয়ে বললো—
"আহারে! আবারও কাজে নামতে হলো ওকে!"
চারজন মিলে ধরলো খাটিয়ার চার কোণা,
আমার শরীর কাঁপলো হালকা,
কিন্তু আমার জানার কথা নয়,
আমি যে এখন নড়ার ক্ষমতাহীন!
ধীরে ধীরে এগিয়ে চললো কাঠের খাটিয়া,
রোদের তাপে তার গায়ে আগুনের আঁচ,
কিন্তু আমার সে অনুভূতি নেই,
আমি এখন কেবল বোঝা,
আর খাটিয়া তো বোঝা বইতে অভ্যস্ত!
পেছনে লোকজন হাঁটছে ধীরগতিতে,
কেউ চুপচাপ, কেউ ফিসফিসিয়ে বলছে—
"এই তো সেদিনও হাসছিলো!"
"কে জানতো, এত তাড়াতাড়ি যাবে?"
আমার খাটিয়া দুলছে কাঁধের স্পর্শে,
তার কাঠের গায়ে চাপ পড়ছে একেকজনের হাতে,
তবু সে নির্বিকার,
কারণ তার কাজ তো কেবল বহন করা!
মসজিদের পাশে এসে থামলো খাটিয়া,
আমাকে নামিয়ে রাখা হলো ধীরে,
শেষ নামাজ হবে, দোয়া হবে আমার জন্য,
আর খাটিয়া তখনও নিশ্চুপ।
নামাজ শেষে আবার আমাকে তুলে নেওয়া হলো,
আমাী কাঠের খাটিয়া তখনও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে,
কাঁধের ওপর ভার অনুভব করছে,
কিন্তু কোনো অভিযোগ নেই তার!
শেষবারের মতো পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে,
মাটির গর্তটা অপেক্ষায় ছিল আমার জন্য।
খাটিয়া তখনো আমাকে ধরে রেখেছে,
কিন্তু সে জানে, এবারই শেষ বিদায়!
কেউ আমার মাথা ধরে নামালো,
কেউ আমার পা ধরলো,
খাটিয়ার বুক থেকে সরে গেল আমার শরীর,
এবার সে হালকা হলো।
এক আঁজলা মাটি পড়লো আমার গায়ে।
তারপর আরও, আরও, আরও...
একসময় আমাকে আর দেখা গেল না।
শুধু পড়ে রইলো কাঠের খাটিয়া এক কোণে,
আর অপেক্ষা করতে লাগলো,
পরবর্তী কার পালা আসবে?