ক্লান্তির শহর,
যেখানে রোদ কাঁদে ট্র্যাফিকের ধোঁয়ায়,
আলো আর ছায়ার মাঝে প্রতিদিন চলে বিরোধ—
একদিকে কাঁচে মোড়া আকাশছোঁয়া স্বপ্ন,
অন্যদিকে পেটের ক্ষুধায় নুয়ে থাকা বিকেল।
এই শহর জানে না থামা, জানে না অপেক্ষা,
তবু কিছু মুহূর্ত গোপনে বানায় ঘর।

ভিক্টোরিয়া পার্কে বসে প্রজাপতির মেলা,
গাছের ছায়ায় ঢেকে রাখা কিছু স্বপ্নের ফড়িং।
নগরের ব্যস্ততায় যখন পথেরা হাঁপিয়ে ওঠে,
বিকেলের বাতাসে হাতে একখানা গোলাপ
ছেলেটা দেয়,
মেয়েটার চোখে হাসে আলো।
যেন জানে, এই শহরে রঙ ফুরিয়ে যায় ঠিকই,
তবু গোলাপের লাল সহজে সরে না,
সে এক জেদি স্মৃতি, ভালোবাসার প্রতীক।

শাঁখারী বাজারে মেয়েটার শখের হাটাচলা
চুড়ির ঝনঝন, মেহেদির গন্ধ,
আঙ্গুলে বাজে পুরনো ঢাকার সুর।
তার হাঁটার তালে একটা ছোট বৃষ্টি নামে,
দোকানিরা চেনে তাকে,
দরদামে কঠিন,
তবু ভালোবাসায় নরম
একটা ভুলে যাওয়া চিঠির মতো কোমল।

বিউটি বোর্ডিংয়ের ছাদে
তারা খুঁজে পায় একটু ফাঁকা আকাশ,
নিচে কোলাহল,
আর উপরে সিগারেটের ধোঁয়ার ফাঁকে নিঃশব্দ কথা।
ছেলেটি বলে
“এই শহরে আমরা শুধু স্মৃতি হবো একদিন...”
মেয়েটি চুপ থাকে,
তার চোখে তখন চকচক করে
অদেখা এক সন্ধে,
যেখানে কথা আর চোখ একসাথে হারিয়ে যায়।

বেকার দুপুরে কাকের ডাক,
আন্দোলনের রাতের পোস্টারে নাম
এসব ছাপিয়ে,
পুরান ঢাকার গলির এক কোণে
তারা রেখে যায় গোলাপের গন্ধ।
ভালোবেসেছিল,
তারপর হয়তো ভুলেও গিয়েছিল সেই কথা।
তবু শহর জানে,
গোলাপ কখনও ভুলে না।

তাদের ভালোবাসার ঠিক পাশেই
এক ছিন্নমূল শিশু,
একটা ফেলে দেওয়া ঠোঁটের হাসিতে,
একটা শিশুর চোখে,
যার ভালোবাসা এখনো গলির কুকুরের সঙ্গেই ভাগ হয়।
যার মা শরীর বিকিয়ে সংসার গড়ে
রাত হলে সে মেয়েটিকে গল্প শোনায়,
রাজপথে ঘুম পাড়ায়
এক আকাশ ভরা মিথ্যে নিয়ে।
সেই শিশুটিও চায় গোলাপ,
তবে দেয়ালের ও-পারে,
যেখানে কেউ চায় না তাকাতে।

কোনো মোড়ে পড়ে থাকে ড্যান্ডিখোরের ছায়া,
চোখে তার শহরের সব রঙ পুড়ে ছাই,
সে বলে না কিছু
তবু জানে,
এই শহর চোখ রাখে, তবু না দেখার ভান করে।