এই যে নদী— তার বুকে জমে আছে রাতের কঙ্কাল,
সকালের আলোয় ভেসে যায় অজস্র মৃত চাঁদের টুকরো।
কোনো এক অদৃশ্য হাত গুঁড়িয়ে দেয় তীরের বুক,
আর আমি? আমি শুধু দেখি—
কীভাবে জলের রং হয়ে ওঠে রক্তের মতো ঘোলাটে,
আর কীভাবে এক ফালি আকাশ মিশে যায়
নিঃশব্দে এক গভীর অন্ধকারের গর্ভে।

ঝড়ের ভাষা শিখেছি আজ,
ঝরনার গান ভুলে গেছি কাল—
তবুও এই নদীর বুকে ভাসে
অসংখ্য মুখ, অসংখ্য নামহীন ইতিহাসের টুকরো।
কেউ বলে— এখানে ডুবে আছে সোনালি সূর্যের স্মৃতি,
কেউ বলে— এখানে লুকিয়ে আছে ভয়ংকর একাকীত্বের গল্প।

আমি শুনি, নদীর জলে কাঁদে এক উতলা প্রেত,
যে নিজের ছায়াকে খুঁজে ফেরে প্রতিটি সন্ধ্যায়।
তার কণ্ঠে শুনি—
"সময় তো নদীর মতোই,
এ-কূল ভাঙে, ও-কূল গড়ে,
আর আমি? আমি শুধু এক টুকরো কাদামাটি—
যাকে ভাঙতেই হবে, গড়তেই হবে।"

ঝড়ের পরে আসে নীরবতা,
আর নীরবতার পরে আসে—
অনেকগুলো প্রশ্ন, অনেকগুলো অদেখা উত্তর।
নদীর জল তখন শিউরে ওঠে,
মনে হয়— কোথাও না কোথাও
একটা নতুন তীর জন্ম নিচ্ছে,
যেখানে হয়তো কেউ একা দাঁড়িয়ে
গুনছে তার ভাঙা হৃদয়ের টুকরোগুলো।

আমি জানি, নদীর এই খেলা শেষ হবে না কোনোদিন,
কারণ—
এ-কূলের মৃত্যু মানেই ও-কূলের জন্ম,
আর এই চক্রাকার যাত্রায়
আমরা সবাই শুধু একেকটা মুহূর্ত,
একেকটা অস্পষ্ট ছায়া,
যাকে ভাঙতেই হবে, গড়তেই হবে—
নদীর মতোই।