শব্দেরা কাঁদে, অশ্রুর গোপন বাঁশিতে বাজে বিষণ্ন রাগ,
ভাষার গর্ভে জমে থাকে শত সহস্র নির্জন রাত।
চায়ের কাপে ডুবে থাকা বিস্কুটের গভীর বিলাপ,
পৃথিবীর মানচিত্রে খুঁজে ফেরে তার হারানো শিকড়।

চায়ের মৃদু উষ্ণতায় মিশে থাকা দূরদেশের পদধ্বনি,
বিস্কুটের ভাঙা চূড়ায় চাঁদ ঝুঁকে আসে গোপনে।
চকোলেটের মিষ্টি স্বরে শুনি মেক্সিকোর গহন ডাক,
আর ফরাসি ভাষার মেন্যুতে ধরা পড়ে সময়ের শেকল।

পেয়ালার রঙিন মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে
ইতিহাসের বিধ্বস্ত দেহ—পাণ্ডুলিপি হয়ে মিশে যায়
দারোয়ানের হাতে তুলে দেওয়া বকশিশের অক্ষরে।
সবকিছু কেবলই এক অপূর্ণ লিপি, শিকড়-বিহীন স্মৃতি।

মসলা যখন বলে উঠে আরবের শুষ্ক মরুভূমির গল্প,
তখন মরিচের ঝাঁঝে ফারসির কবিতার প্রতিধ্বনি,
ফলমূলের রসে টের পাই পর্তুগালের আদি সুর—
আনারসের সোনালী গন্ধে খুলে যায় ভূগোলের পাতা।

জল আর আগুনে মিশে থাকে দুই বিপরীতের স্পর্শ,
পথের ধারে ফেলে রাখা শব্দের ভগ্নাংশগুলো
জন্ম দেয় নতুন ভাষা, নতুন সুরের প্রণয়।
তোমার অক্ষরে অক্ষরে জেগে ওঠে সভ্যতার অন্তিম ক্রন্দন।

বই আর কেতাবের মধ্যে রক্তিম হয়ে ওঠে কালচক্রের চাকা,
কলমের ডগায় ঝরে পড়ে স্মৃতির দগ্ধ সুরা।
আলো আর অন্ধকারের প্রতিটি শূন্যতায়
ভাষার শরীর থেকে জন্ম নেয় শব্দের নতুন সন্তান।

শব্দেরা খুঁজে ফেরে তার হারানো ব্যাকরণ,
তোমার কণ্ঠে তাদের গাঢ় নীরবতা প্রতিধ্বনিত হয়।
তুমি কি দেখেছ শব্দের গভীরে লুকিয়ে থাকা ছায়াপথ?
একটি শব্দ, এক ফোঁটা অশ্রু, এক মহাজাগতিক আর্তনাদ।

তাই শব্দেরা চায় মুক্তি, এক মহাকাব্যের ভ্রূণ—
যেখানে ভাষার প্রতিটি অলংকার, প্রতিটি ভাঁজ
জন্ম দেবে এমন এক কবিতা,
যা হবে কালের অন্তর্গত নিঃশব্দ চিৎকার।