তুমি কি শুনতে পাও সেই রাত্রির কান্না, যখন ঘুমিয়ে ছিল শহর, কিন্তু শাসকের মুঠোয় জেগে ছিল আগুন?
যখন রাত্রির বুক চিরে ছুটে গিয়েছিল একঝাঁক বুলেট, আর বাংলার মাটিতে ঝরে পড়েছিল লাল অক্ষরের বর্ণমালা!
তাদের চোখ ছিল শীতল, বরফের মতো নীল,
তাদের শ্বাস ছিল বিষাক্ত, ধোঁয়ার মতো ধূসর,
তারা চেয়েছিল এক টুকরো কালো পতাকা উড়িয়ে দিতে পূর্ব দিগন্তে—
তারা চেয়েছিল আমাদের মুখের ভাষা চুরি করে নিতে,
আমাদের কণ্ঠে গুঁজে দিতে এক অচেনা, এক অভিশপ্ত ভাষার শিকল!
কিন্তু বাংলা কি বন্দি হয়?
এই ভাষা কি কোনো বন্দিশালায় গলায় দড়ি দিয়ে রাখা যায়?
এই ভাষা তো জন্ম নেয় রক্তের উষ্ণতায়,
এই ভাষা তো জেগে ওঠে বিপ্লবীর বুকে বজ্র হয়ে!
তাই একদিন রাস্তায় নামে তরুণের ঢল,
তাদের মুঠিতে মাটি, হৃদয়ে আগুন, কণ্ঠে বজ্রনিনাদ—
"না, বাংলা থাকবে! বাংলা জাগবে! বাংলা রক্তে লেখা হবে!"
তারা জানত, এই পথের শেষে অপেক্ষা করছে মৃত্যু,
তবু তারা ছুটে গিয়েছিল বুলেটের সামনে,
তাদের পায়ের নিচে কেঁপে উঠেছিল বর্বর সাম্রাজ্যের মসনদ,
তাদের শিরদাঁড়া ভাঙার জন্য ছুটে এসেছিল সশস্ত্র হায়েনার দল!
একটি গুলি!
একটি বুক ফুঁড়ে যায়—
দ্বিতীয়টি, তৃতীয়টি, চতুর্থটি!
আর তখনই, রক্তে ভিজে ওঠে ভাষার মাটি,
রফিক পড়ে যান, সালাম শুয়ে পড়েন,
বরকতের চোখে তখনো জ্বলছিল এক টুকরো আগুন,
আর আকাশ কেঁপে উঠে শুনিয়েছিল—
"বাংলা আমার! বাংলা আমার!"
কিন্তু শাসকেরা জানত না,
যে ভাষাকে দাফন করতে আসে অত্যাচারীরা,
সে ভাষা পাখির ডানায় ভেসে ওঠে ভোরের আকাশে,
সে ভাষা জনতার রক্তের স্পন্দনে হয়ে ওঠে শপথ!
সেই রক্তের ঋণ কি আমরা শোধ দিয়েছি?
নাকি ফুল হাতে দাঁড়িয়ে স্মৃতির মিনারে,
আমরা ভুলে যাই, কেমন করে জাগে একুশে ফেব্রুয়ারি,
কেমন করে জন্ম নেয় এক জাতির আত্মপরিচয়?
আজও বাতাসে ভাসে সেই প্রশ্ন,
আমরা কি সত্যিই তাদের উত্তর দিতে পেরেছি?