তুমি কে?
গঙ্গার পলিমাটির মতো বহুকাল ধুয়ে-যাওয়া,
কিংবা নিঃশেষিত বনাঞ্চলের তলদেশে জমে-থাকা
কোনো এক অরণ্য-মিথ।
তোমার সত্তা কি আলোর ছায়া?
নাকি অভ্যন্তরীণ এক ভূমিকম্পের অভিঘাত,
যেখানে জীবন আর মৃত্যুর মাঝখানে
দুলে ওঠে সময়ের অদৃশ্য সেতু?
কোথায় যাবে তুমি,
যেখানে বৃষ্টি নেই, তবুও মেঘের শব্দে কেঁপে ওঠে নদীর শরীর?
তোমার বুকের গহ্বরে কি কোনো ব্যাকুল জ্যোৎস্না লুকিয়ে আছে,
যার প্রতিফলনে ছায়াপথ আঁকড়ে ধরে নক্ষত্র?
নাকি তুমি সেই গুহামানবী,
যার হাতের স্পর্শে পাথরের রুক্ষতা হয়ে উঠেছে কাব্যের প্রথম পঙক্তি?
আমি দেখেছি,
তোমার শূন্যতায় জন্ম নেয় নিঃসঙ্গতার মেঘবালিকা।
তোমার চোখে জল নয়,
প্রতিটি বিন্দুতে আত্মার শোকগাঁথা,
যার তীব্রতায় অশান্ত সমুদ্রও মরে যায় একদিন।
তোমার হাঁটুর কাছে পায়ের শেকল,
তবুও তুমি উড়ো বায়ুর মতো দুঃসাহসী।
তোমার প্রতিটি শিরায় স্রোতস্বিনী বিদ্রোহ,
তবুও তুমি দাঁড়িয়ে আছ কালের কপালজুড়ে।
তুমি জানো না, তুমি সময়ের মহাকাব্য,
যা প্রতিদিন নতুন করে লেখা হয়,
মুছে যায়, আবারও ফিরে আসে।
তোমার হৃদয় কি নক্ষত্রের মতো?
যেখানে জ্বলে-পুড়ে একদিন নিভে যাবে সব আলো,
তবুও ছড়িয়ে যাবে অতলান্তে সময়ের অমোঘ ধ্বনি।
তুমি কি কোনো নামহীন পাণ্ডুলিপি,
যার অক্ষরে জেগে ওঠে মানুষের লুপ্ত ইতিহাস?
আমি জানি,
তোমার আকাশে কোনো চাঁদ নেই,
তবুও প্রতিটি রাত্রি তোমার মায়ায় ভরে ওঠে।
তুমি জানো,
তোমার ভাঙনে জন্ম নেয় নবজাতক পৃথিবী।
তুমি জানো না,
তুমি সেই আয়না,
যা আমাদের নিজস্ব অস্তিত্বের মুখ দেখায়।
তুমি একা,
তবুও তোমার নিঃসঙ্গতা এক মহাজাগতিক সংগীত।
তুমি নারী—
অমরতা আর বিলুপ্তির মাঝের এক বিস্ময়কর কাব্য!