সন্ধ্যার জলছবি, কুয়াশায় বিলীন সবুজের শয্যা,
গহন অরণ্যের ভিতরে আমি হেঁটে যাই—
শরতের শুকনো পাতার হাহাকারে—
মৃত্তিকার বুক ভেদ করে উঠে আসে অতীতের নিঃশ্বাস।
এখানে সব কোলাহল থেমে গেছে;
শুধু একা এক চিল উড়ে যায় শূন্য গগনের দিকপানে।

একটি গাছ, যেনো শতাব্দীর নীরব দ্রষ্টা,
তোমার ডালে-ডালে শুয়ে আছে পুরোনো স্মৃতির ছায়া;
তোমার ফাঁক গলে আকাশ ঝরে পড়ে
নক্ষত্রের নিস্তব্ধতা নিয়ে।
আমি শুনি, দূরের নদীর মৃদু স্রোত,
যেন অতীতের বেদনাগান।

প্রান্তরে কাশফুল, চাঁদের আলোয় ভেসে ওঠে
জোনাকির আবছায়া আলোকিত শূন্যতায়।
হৃদয়ে বেজে ওঠে নীরব বাঁশি—
যেন বিরহীর কণ্ঠ থেকে ঝরে পড়া স্বপ্নের রাগিনী।

তুমি কি শুনেছিলে পৃথিবীর শেষ আর্তনাদ?
পিতামহের চিতার ধোঁয়া,
শিশু ভ্রূণের চোখের ভিতর
জমে থাকা শূন্যতার ব্যথা,
সব মিলে গড়েছিলো এক অনন্ত কাব্য।
আমি সেই কাব্যকে খুঁজতে এসেছি
তোমার স্নিগ্ধ বুকে।

তোমার শাখায় বয়ে যায় বাতাস,
যেন কোনো হারানো সময়ের ডাক।
তুমি কি জানো?
তোমার দেহে মিশে আছে আমার পূর্বপুরুষের রক্ত,
তোমার প্রতিটি পাতা আমার অতীতের গান গায়।
আমি নতজানু হয়ে শুনি—
আমার হারানো জন্মভূমির কান্না।

শূন্যতার মাঝেও এক অদ্ভুত সুর,
আমাকে টেনে নেয় তার গভীর স্রোতে।
আমি দেখি—
প্রান্তরের আলোছায়ায় অমর এক প্রেমের ছায়াপথ,
যেখানে মানুষ জন্মায়, মরে,
তবুও রেখে যায় স্মৃতির অতীত।

এই অরন্য, এই নিঃশব্দতা—
তোমার বুকে আমি নতুন শব্দ খুঁজে ফিরি,
নতুন স্বপ্ন বুনি,
যেন কালো মেঘের চাঁদর সরিয়ে
আলো ঝরে পড়ে পৃথিবীর প্রতিটি কোণে।