অদৃশ্য আঙিনায় শব্দেরা জমেছে বেদনার,
শহরের গলিতে বাতাসে ভাসে কুয়াশা, ঘুমন্ত অশ্রু–
আমার নির্দয় পথ, সেও এক পাথরের মায়া বয়ে যায়।
চেয়েছিলাম আশ্রয়, হয়তো খানিকটা প্রশ্রয়,
কিন্তু দেখেছি আশ্রয় কেমন শিকল ছিঁড়ে পালায়।

সেখানে, খালের পাড়ে তৃষ্ণার্ত রোদ্দুরের মতো দাঁড়িয়ে
আমি দেখেছি রাতের অসীম অবিনাশী হাত–
আবার ছুঁড়ে ফেলে দেয় এক পর্বের ঘড়ির কাঁটা,
আমার ঘরে ফেরার স্বপ্নকে গ্রাস করে রাখে প্রাচীন শূন্যতায়।

ভাড়া মেটানোর শেষ রাতগুলোয় স্মৃতি ছিল এক তীব্র ভয়–
গভীর রাতে উড়ে আসা মৌমাছির তীব্র গুঞ্জন যেন
আশ্রয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যায়; আমি কাঁপতাম ভয়ে।
এখনো মনে হয়– যদি আবার ঠেলে দেয় কোন বাঁধভাঙা রাস্তায়?

ঈশ্বর নেই বলেই তো আমি জানি, এ শহরেও নেই
কোনো অনন্ত সত্তার ছোঁয়া– সে তো ঠান্ডা নক্ষত্রের মতো
দূরে দূরে থাকে, একরাশ প্রাচীনতা ঘিরে।

কিন্তু আমার ভাঙা ছাদের নিচে জমে থাকা অন্ধকারের ঘ্রাণে
আমি কখনো হারাই না; বরং ফিরে ফিরে পাই সেই
মুঠো মুঠো শূন্যতার সোনালী আলো, স্বপ্নের মরীচিকা।

আমি জানি, একদিন আবার ধূসর আকাশের গায়ে
ফুটে উঠবে শিকড়, মায়াবী জাল–
আমার সেই আগের বাড়িটায়, শহরের স্মৃতির ছায়ায়,
এবং শূন্যতায় মোড়া বসন্তের গভীরে
আমি রয়ে যাবো, একমাত্র আমি;

যেন এ প্রান্তর ছুঁয়ে নতুন কোনো গানে ভরে উঠে রাতের বুক–
আমার রিক্ত আশ্রয় খুঁজে নেয় অনন্তের ঠিকানা,
আর ভাঙা মনের দেয়ালে খোদাই হয় জ্বালাময়ী চিহ্ন,
যেন একান্তেই বেঁচে থাকি শহরের কান্না আর নিঃসঙ্গতায়।

এই তো আমি, কোথাও নেই, তবু প্রতিটি পথে–
নতুন আশ্রয়ের খোঁজে পথে পথে ঘুরে বেড়াই
আর শূন্যতার মায়ায় ভেসে যাই,
জানি না, কবে আবার থামবো
আলো না থাকলেও, পথ আছে যতদিন!