নারী, তুমি কি জানো—
নদীর গভীরে গোপন শিলার মতো লুকানো
তোমার দুঃখের ইতিহাস,
যার প্রতিটি রেখা ভেঙে দেয় পুরুষের অহংকার?

তারা বলে,
তোমার চোখে জল মানেই দুর্বলতা,
তোমার মুখের হাসি মানে ছলনা।
তারা জানে না,
তুমি তো সেই মরুভূমি
যে বালুকার প্রতি কণায় গড়ে তোলে
দিগন্ত বিস্তৃত এক দুঃস্বপ্ন।

তারা বলে,
তোমার শরীর এক দাগ, এক ছায়া—
যা চিরকালই পাপের বাহক।
কিন্তু জানে কি তারা?
তোমার প্রতিটি স্পন্দন,
তোমার প্রতিটি নীরবতা—
গড়ে তোলে এক মহাকাব্য,
যা পুড়িয়ে দেয় ইতিহাসের নীলপত্র।

তুমি কি দেখেছো নদীর স্রোত,
যা ভাসিয়ে নিয়ে যায় সমস্ত পাপ?
তুমি কি শুনেছো পাতার মর্মর,
যেখানে লুকিয়ে থাকে প্রতিবাদের সুর?
তোমার প্রতিটি নিঃশ্বাস
তোমার প্রতিটি আর্তনাদ—
জাগিয়ে তোলে এক নতুন ভোর।

তুমি নারী—
প্রাচীন পাথরের মতো শক্ত,
অমর যন্ত্রণা নিয়ে অনন্তের পথে
হেঁটে চলা এক প্রতীক।
তুমি জানো,
তোমার গভীরতা মাপতে পারে না কেউ,
তোমার নীরবতা ভাঙতে পারে না কোন প্রবল ঝড়।

তারা যে কাঁটাগুলো ছুঁড়ে দেয়,
সেগুলোই তো তোমার মুকুটের শোভা।
তারা যে দাগগুলো এঁকে দেয়,
সেগুলোই তো তোমার অস্তিত্বের মানচিত্র।

তুমি তো সেই প্রত্নতীর্থ
যেখানে সময়ও মাথা নত করে।
তুমি সেই কালচক্র,
যার প্রতি ঘূর্ণিতে হারিয়ে যায় সব দম্ভ, সব অহংকার।

তাই আজ দিগন্তের কাছে প্রশ্ন রাখি,
কে পাপী?
যে নারী—
যার স্নেহে পৃথিবী পায় দিগন্তের চুম্বন?
নাকি সেই পুরুষ—
যার অস্তিত্ব ভাসে তারই ঘাম আর রক্তের জলে?

তোমার নামে দাগ তুলে,
তোমার নিঃশ্বাসে আগুন লাগিয়ে—
তারা ভুলে যায়,
তোমার নীরবতা একদিনই
ভাঙবে সীমানার দেয়াল।
তুমি যে অনন্ত,
তুমি যে অসীম—
নারী।