যখন পৃথিবী এক দগ্ধ শীর্ণ অরণ্যে রূপ নেয়,
মায়ের কপালে লাল টিপের মতোই রক্তজবা আলো জ্বলে ওঠে।
কোথাও এক বিষণ্ণ নদী, তার কালো স্বচ্ছ জলে
বিস্তৃত হয় পলিমাটি—শ্রাবণের আকাশে গুমরে ওঠা মেঘের মতো।
এক আকাশ-ফাটানো নির্জনতায়,
একটি পাতা বাহার গাছ মাটির শিকড়ে ডুবে যায়,
তার ডালপালা আঁকড়ে ধরে ছোট ছোট প্রশ্নের ছায়া।
তোমার চোখের জলে ভেসে যায় এক গোপন গ্রহ,
যার নাম হতে পারতো ‘অতল’।
আমার মা, এক দেবী—
তার প্রতিটি চুলে যেন এক একটি সমুদ্রের গল্প লেখা,
লাল লিপস্টিকের রেখায় আঁকা এক বিন্দু আগুন।
তবু তার কণ্ঠস্বরে ঝরে পড়ে অমল বাতাসের গান।
তার প্রতিটি শব্দ—
যেন আকাশের সব তারা হারিয়ে একমাত্র দীপ্তি হয়ে জ্বলছে।
তোমার জন্মের আগে থেকেই পৃথিবী ছিল ভাঙা আয়নার মতো,
প্রতিটি টুকরোয় লুকানো ইতিহাসের ব্যথা।
আর আমি এক স্বপ্নের ভেতর দেখেছিলাম—
তোমার হৃদয়, যেন খরস্রোতা নদীর ভিতর বাঁধা এক নৌকা,
যেখানে তুমি কেবল একবার আশ্রয় চেয়েছিলে।
মা ছিলো সবুজ দিগন্তের একটি সেতু,
যে সেতু ভাঙে না, ভাঙতে দেয় না সময়কে।
তবু তার মুখে জমে থাকা পলাতক কষ্টের ভাষা
আজও এক মহাকাব্যের কাহিনি হয়ে পড়ে।
এখানে শব্দেরা একে অন্যকে আলিঙ্গন করে,
তবু মাঝেমাঝে তুমুল অন্ধকারে
তারা একা হয়ে যায়।
মনে হয়, যেন পৃথিবী এক মহাসংকটে জন্ম নিয়েছে,
যার প্রতিটি আঘাতে মা একবার কেঁপে ওঠে।
এই শীতলপুরের ছাদে বসে একদিন এক শিশুর কান্না
শুনেছিলো আকাশ, আর তার উত্তর
ছিলো নিরবতার কবিতা।
পৃথিবীকে বোঝো—
এখানে প্রতিটি সম্পর্ক,
প্রতিটি যন্ত্রণা,
প্রতিটি আশ্রয় আর ত্যাগ
একটি মহাজাগতিক চক্রে বাঁধা।
শুধু নিজের ভিতর
মায়ের হাসিমুখের প্রতিচ্ছবি আঁকো।
মা হারিয়ে যায় না,
সে সময়ের গভীরে দাগ রেখে চলে যায়,
তার মায়া আকাশের শেষ তারাটুকু হয়ে রয়ে যায়।