সকাল নামে না, সন্ধ্যা ঝরে না—
মেঘের পাঁজর ফুঁড়ে উড়ে যায় অনিঃশেষ দিন,
অতিপারদর্শী সময়ের গলিতে
পাথরের মতো ছড়িয়ে থাকে মুখস্থ সত্যের মৃত ফুল।
খয়েরি ঘাসের গায়ে আগুনের অক্ষর বসিয়ে
অতীতের সব শব্দ পুড়িয়ে ফেলে ওরা,
ওদের ভাষায় আর বসন্ত নামে না,
কেবল সংজ্ঞার রেখা ধরে খুঁজে নেয় ভবিষ্যৎ।

ওদের চোখে বসবাস করে ঘড়ির কাঁটা,
সিলেবাসের মেঘভাঙা জল ছুঁয়ে
অঙ্কের অরণ্যে হারিয়ে যায় হৃদয়ের বুনো গাছপালা।
অলীক আলোয় ঝলসে যায় শৈশবের ইচ্ছেরা,
ক্যালেন্ডারের কোণায় গুটিয়ে থাকে রোদ্দুরের শরীর।
সূর্য নামে না, চাঁদ ওঠে না—
বিজ্ঞান বইয়ের পাতায় আঁকা থাকে স্নায়ুকোষের মানচিত্র,
তবু ওরা কখনো নিজেদের মনোজগতের
একটি সড়কেরও সন্ধান পায় না।

ওদের বাবারা জীর্ণ অফিসঘরের গন্ধ মেখে
ঝালমুড়ির সন্ধ্যায় জীবন কাটায়,
কাঁচা ঘামে জলে ভিজে যায়
বুকপকেটের স্বপ্নবোনা রুমাল।
ওদের মায়েরা পাথরঘষা হাত নিয়ে
রান্নার হাঁড়িতে নক্ষত্র গলিয়ে রাখে,
তবু তপ্ত ইমেলের জানালায় দাঁড়িয়ে
সন্তানের মুখ দেখতে গিয়ে কেবলই দেখতে পায়—
একটি প্লাস্টিকের হাসির সাদা ছায়া।

ওরা শিখে যায় উচ্চারণের নিয়ম,
শিখে যায় ইতিহাসের বাহ্যিক কাঠামো,
শিখে যায় কীভাবে সংকেত পাঠিয়ে দিতে হয়
বিদেশের উজ্জ্বল কোনো মহাসড়কে দাঁড়িয়ে থাকা
একটি অচেনা মাতৃভাষাকে।
কিন্তু শিখতে পারে না
নদীর শব্দ কেমন, কাঁঠাল পাকার গন্ধ কেমন,
মায়ের চোখে বিকেলের আলো কেমন।

দিন শেষে ওদের জানালায় নামে নক্ষত্রের ছায়া,
অন্তহীন ওভারটাইমের ক্লান্তি নিয়ে
বৃদ্ধ বাবা-মায়েরা সেই ছায়ার নিচে বসে অপেক্ষা করে—
অবশেষে একদিন নক্ষত্রেরা আলো পাঠাবে,
একদিন ফিরে আসবে ওরা,
একদিন হয়তো ওদের চোখেও ফুটবে
পৃথিবীর প্রথম ভোরবেলা।