যখন কুয়াশার চাদরে লেপ্টে যায় পৃথিবীর স্তব্ধ শীত,
একটি আর্তনাদ ছুটে আসে দূর আকাশের গর্ভ থেকে,
বাতাসে কাঁপে এক কাঁচা চৈতন্যের স্পন্দন।
ক্লান্ত ভূমি, মাটির প্রাচীর—
তোমার গভীর মায়াজাল আজ ব্যর্থ,
অন্ধকারের নীড়ে ত্যাগ করা এক শিশু—
নবীন সৌরভে ভেজা তার অস্তিত্বের প্রথম সুর।
পথের ধারে, ঝাউপাতার কোলাহলে
তার কান্না এক মহাকাব্যের শুরু—
নির্দয়তার ঘাতকতা ছিঁড়ে ফেলে তার সম্ভাব্য জীবনের পৃষ্ঠা।
মৃত্যুহীন সময়ে, হৃদয়ের চক্রবাল ঘুরে ফিরে বলে—
মানুষ! তবু কেমন করে তুমি হারাও
তোমার নিজের মনুষ্যত্বের আলো?
শিশির-ভেজা রাতের মতো তার চোখ,
যেন এক লাল-নীল মহাকাশের বীজ।
সে কি জানে, তার নাম লেখা হয়নি
কোনো তারকার নীলাভ ছন্দে?
সে কি জানে, জন্মের আগে থেকেই
তার ভাগ্য গর্ভে বেঁধে রাখা ছিল বিষাদের শৃঙ্খলে?
তোমরা যারা অদৃশ্য সীমানার কারিগর,
তোমাদের নৈতিকতার প্রতিটি শিকল কি
তবে আজ ভেঙে গেছে ক্লান্তির ঢেউয়ে?
জীবন যেখানে শুরু হয়, সেখানে কি আর শেষ হয়ে যায়?
নাকি আকাশের গহনায় তার জন্য রয়ে গেছে
নক্ষত্রের ছাইভরা আরেকটি গল্প?
নির্বাক পথচলতি মানুষ,
তোমরা কি শোনো সেই ছায়ার আর্তি?
অথবা, কুয়াশার পাথরে ঢেকে যায়
তোমাদের আত্মার প্রতিধ্বনি?
তোমাদের হাতে গড়া সভ্যতার নিলামে
শিশুটির শীতার্ত হৃদয় কি এক চিরকালের হারিয়ে যাওয়া কণ্ঠস্বর?
পৃথিবী কাঁপে, তবু নীরব।
তোমাদের দৃষ্টি কোথায় ছিল, যখন এক জননী
নিজের হৃদয়ের পালক ছিঁড়ে রাখল পথে?
তোমরা কি জানো, একটি শিশুর কান্না
কেবল একটি প্রাণের নয়,
সমস্ত সৃষ্টির?
জীবন থেমে থাকে না।
হয়তো সে বেড়ে উঠবে,
পথের দগ্ধ জলে শিখবে তার নিজের নাম।
কিন্তু তুমি, মানুষ!
তোমার হৃদয়ের শিকল আরেকবার খুলতে
তোমার কত যুগ লাগবে?