রেলপথের ধূসর পাথরে বুনো রোদ ঝরে পড়ে,
ধোঁয়াটে বাতাসে গুমরে ওঠা অস্পষ্ট শিঙ্গার আওয়াজে
কেউ দাঁড়িয়ে থাকে—একা, হিমায়িত মহাকাল।
তাঁর দেহে জাগ্রত পিতলের দীপ্তি,
তবু বুকে কোনো স্মৃতি নেই, কপালে শূন্যতার মানচিত্র।
শূন্য চোখের গভীরে যেন আটকে আছে
সহস্র বছরের আত্মার যন্ত্রণার ধ্রুবক।
হয়তো তিনি নগরের অযাত্রী,
কোনো যাপনের প্রান্ত ছুঁয়ে বসে আছেন
নিষ্ফল প্রার্থনার সমুদ্রের ধারে।
কার মুঠো থেকে ছিটকে পড়া এক বুনো সূর্যমুখী,
তাঁর পায়ের তলে গুঁড়িয়ে যায় বিনষ্ট গোধূলির মতো।
পাশে ছুটে যায় ট্রেনের কংক্রিট গর্জন,
পথিকের ভিড়—সময় যেন কাঠের শরীর হয়ে
তাঁকে ভুলে যায়।
তাঁর নগ্ন দেহ, দিগন্তের মলিন ক্যানভাস,
মানবীয় মূর্তির বিপরীতধারা,
যেখানে কোনো চাদরের প্রয়োজন নেই।
অন্ধকারের চাঁদনি রাতে তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন
বহমান নদীর প্রতিচ্ছবি হয়ে,
তার ছায়ায় ঢেকে যায় শূন্য চাঁদের আলো।
প্রতিটি শ্বাস তাঁর যেন এক-একটি প্রাচীন চিৎকার,
যা আকাশের ফাটা স্তবককে কাঁপিয়ে তোলে।
একদল পথিক ছায়া হয়ে চলে যায়,
তাঁর ছায়াকে পদদলিত করে—
তারা তাঁকে দেখে না, অথচ তাঁকে এড়িয়ে যায়।
শিশুর বিস্ফারিত চোখে ধরা পড়ে
তাঁর অপার্থিব অস্তিত্ব,
যেন সে জিজ্ঞাসা করে—
কে এই মহাপুরুষ? তাঁর গভীরতায় লুকিয়ে থাকা রূঢ়তা,
যার উত্তর কেবল ধ্বংসের মাটির মধ্যেই।
অন্ধকারের অন্তরালে,
দুটি রক্তিম চোখ জ্বলে ওঠে হঠাৎ—
নারী নয়, পুরুষ নয়,
তাদের কণ্ঠ যেন রক্তক্ষয়ী হরিণের চিৎকার,
প্রকৃতির রক্তজমাট সুরের ভগ্ন অংশ।
তারা তাঁকে দেখেও দেখতে চায় না,
তাঁর শরীর যেন ললাটে চাবুক হয়ে বাজে।
তারা থমকে যায়, কেঁপে ওঠে হৃদয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
আকাশ থেকে নেমে আসে এক বৃষ্টিহীন কালো ঝড়,
যা তাদের চোখে ছড়ায় মেঘের বিষাক্ত নীল রঙ।
তারা চিৎকার করে,
তাদের করুণ কণ্ঠ জেগে ওঠে ধ্বংসের সঙ্গীত হয়ে।
তারা মিশে যায় ধুলোয়,
নশ্বরতার মাটিতে রেখে যায় অনন্ত শূন্যতা।
আমি দূর থেকে দেখি এই মহাকাব্যিক দৃশ্য।
আমার সিগারেটের ধোঁয়া ঘুরে যায় অসীমে,
যেন এইসব ছাইই সত্যি—
বাকিটুকু কেবল সময়ের এক ব্যর্থ অ্যালুমিনিয়াম।