তুমি যখন হেঁটে গেলে সেই নীরব হেমন্তে,
চোখে চোখ রাখার আর কোনো সময় নেই—
সব আলো মিশে যায় কুয়াশার ঢেউয়ে,
জীবন-জাগরণে যে সন্ধ্যা জ্বলে উঠেছিলো,
সেও মিলিয়ে যায় নিঃসঙ্গ শিউলির গন্ধে।
এই যে মাটি,
যার শরীর জুড়ে ছড়ানো পাতার শব্দ—
তোমার পায়ের ছাপ ধীরে ধীরে মুছে যায়,
মৃত্তিকার গোপন গানে মিশে যায়
নিঃশব্দ আত্মচিহ্ন, আর আমি
দেখি এক রহস্যময় ছায়ার টানে
আমার হৃদয়—তুমি নয়,
নিয়ে গেলে কুয়াশায় ভরা এক রাত্রির প্রান্তে।
অবসন্ন প্রেমের বাঁক, যেখানে
তোমার স্পর্শের গভীরতা খুঁজে পাই
ধূলিকণার ভেতর রোদ্দুরের খেলা—
প্রত্যেক চুম্বনের মধ্যেও থাকে
একটা হেমন্তের নিষ্প্রাণ আলো,
যেন জীবনের সঙ্গে লেনদেনের প্রতিটি বিনিময়
শেষ হয়েছে কোনো এক অন্যায় অন্তিমে।
আমি কুয়াশার শরীরে খুঁজে ফিরি
তোমার পদছাপ, তোমার নোনতা চুমুর স্বাদ,
যেন কুয়াশার ফোঁটায় শিশিরের মতো
মিশে যায় চোখের জল।
তবু সেই মায়া-মাখা পথে
ফিরে আসি বারবার, দেখি—
প্রতিটি প্রহর, প্রতিটি ম্রিয়মাণ শিউলি
তোমার নাম ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
এই নিঃশ্বাস, এই পথ, এই তৃষ্ণা
সব মিশে থাকে সময়ের বুকে,
যেখানে কোনো কবি হয়তো
শেষ চুমুকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন
অচেনা কুয়াশার আলিঙ্গন।
আর আমি,
প্রতিটি ক্ষণেই তোমাকে দেখি—
নিভৃতে, কুয়াশার শরীরে গোপন প্রার্থনা হয়ে
মিশে যাওয়া কবির আত্মাকে দেখি—
তারপর সব মুছে যায়,
মুছে যায় সময়ের সব রূপকথা।
শুধু শিউলির গন্ধটা থেকে যায়
বাতাসের অনন্ত চুম্বনে।