স্বপ্ন
----আসাদউজ্জামান খান

শরীফ মিঞা ও শাহেলার সুখের সংসার।তাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় তেরো বছর।নলছিটির কাপুরকাঠি গ্রামে তাদের বাড়ি।বাড়ির চারপাশে গাছ আর গাছ, মনে হয় বাড়িটি কোন একটি বড়ো বনের ভেতরে।সকালে পাখির কলরব আর মোরগের ডাকে তাদের ঘুম ভাঙে।শরীফ মিঞা একজন কৃষক। তার স্ত্রী গৃহিনী।শরীফ বেশি লেখাপড়া করেনি আর শাহেলা মোটে অষ্টম শ্রেনি পর্যন্ত পড়ার পড় শরীফের সাথে বিয়ে হয়।শাহেলার অনেক লেখাপড়া করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু বিয়ে হওয়ার পড় আর লেখাপড়া হয়নি।তাই শাহেলার স্বপ্ন,সন্তানদের অনেক লেখাপড়া করাবে।সে বোঝে শিক্ষিত হতে হলে অনেক লেখাপড়া করতে হয়।
শরীফ মিঞা খেতখামারে কাজ করে,যা
উপার্জন করে তা দিয়ে ভালোই তাদের সংসার চলে।বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই।বিয়ে করার দুই বছর পর তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।নাম রাখে রাত্রী।রাত্রীর জন্ম হবার সময় শরীফের বাবা বেচে ছিল,সে অনেক খুশি হয়েছিল,নাতনি হয়েছে এই জন্য।শরীফ তার এক মাত্র ছেলে।একটি মেয়ে ছিল তাও আবার ছোটোবেলায় পানিতে ডুবে মারাগেছে।রাত্রী জন্ম হওয়ার পর রাত্রীর মামা বাড়িতে সে মিষ্টি নিয়ে গিয়ে সু-সংবাদ দেয়,তার নাতনি হয়েছে। রাত্রীর বয়স যখন এক বছর,তখন তার দাদা মারা যান।
শরীফ শাহেলাকে বলে,আমার মেয়েকে লেখাপড়া করিয়ে অনেক বড় ডাক্তার বানাব।ডাক্তার হয়ে সে গ্রামের অসহায়, দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসা করবে। গ্রামের অসহায় মানুষ গুলো চিকিৎসা করাতে পারে না টাকার অভাবে।তাই আমার যতো কষ্ট হোক,যত টাকা লাগুক আমি ওকে ডাক্তার বানাবো!শাহেলা বলে,তুমি ঠিক বলেছ,আমরা একটা কাজ করি,আমাদের সংসারে তো এখন বেশি টাকা লাগেনা,তাই এখন থেকেই আমদের টাকা জমাতে হবে,ডাক্তারি পড়াতে অনেক টাকা লাগে।শরীফকে দিয়ে রাত্রীর নামে একটা অ্যাকাউন্ট করায় শাহেলা,যখন যত টাকা পারে জমা রাখে তারা।

ইদানিং শাহেলার সাথে শরীফের প্রায় ঝগড়া হয়।কিছু হলেই কথার কাটাকাটি হয়।তবে তাদের ঝগড়ার রেশ বেশি ক্ষণ থাকে না। কিছু ক্ষণ যেতে না যেতে আবার তারা মিলিত হয়,কথা বলে।শরীফকে শাহেলা এক রাতে বলে,দেখ আমাদের মাঝে আগে কোনো ঝগড়া হতো না,ইদানিং তুমিও আমার সঙ্গে ঝগড়া কর আর আমিও করি,ঝগড়া করে কী হয় বল?দুজনে শুধু কিছু ক্ষণ কথা-কাটাকাটি করি,কিছু ক্ষণ গেলে আবার আমরা এক হই।দেখো রাত্রী বড়ো হচ্ছে,আমরা যদি এরকম ঝগড়া করি তাহলে রাত্রী তো এগুলো শিখবে!এখন যা আমরা শিখাবো তা রাত্রী শিখবে,তাই আমরা কারনে অকারনে আর ঝগড়া করবো না,তুমি কী বল? শরীফ বলে,হ্যা ঠিক বলছো,আমরা আর কখনো ঝগড়া করবনা।
ক্রমে,ক্রমে রাত্রী রড়ো হয়,তাদের স্বপ্ন সে ডাক্তার হবে।রাত্রীর বয়স যখন পাঁচ বছর হয় তখন রাত্রী কে স্কুলে ভর্তি করে দেয়,নিয়মিত স্কুলে যায়, লেখাপড়া করে।এরই মধ্যে শরীফ ও শাহেলার দ্বিতীয় সন্তান জন্ম হয়।এবার তাদের পুত্র সন্তান হয়েছে,নাম রেখেছে রাহাত।এখন তাদের চার জনের সংসার,ভালোই কাটছে তাদের জীবন।লক্ষ এখন একটাই ছেলে-মেয়ে কে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতন মানুষ করে গড়া।টাকা ও অনেক জমিয়েছে,তাঁ ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচে লাগবে এ ভেবে খরচ না করে আরো জমায়।
একদিন সন্ধ্যায় রাত্রীর ছোট মামা ফোনকরে বলে,আমি জানুয়ারি মাসের পাঁচ তারিখ দেশে আসব।তোমরা আমাকে নিতে ঢাকায় আসবে।তিনি এখনো বিয়ে করেননি।বিদেশে থাকে।রাত্রীর বড় মামা ঢাকায় সপরিবারে থাকেন।রাত্রী কে তার বাবা বলে,আমরা তোমার ছোট মামাকে ঢাকা থেকে আনতে যাব।তা শুনে রাত্রী আনন্দে আত্মহারা!সে কখনো ঢাকা যায়নি।ছোট মামা দেশে আসবেন,তাঁর জন্য অনেক খেলনা নিয়ে আসবেন,সে কথা ভুলেনি রাত্রী।অনেক দিন আগে বলেছিলেন যখন দেশে আসবেন তখন তার জন্য খেলনা নিয়ে আসবেন।
ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ তারা ঢাকায় যাবে।সেখানে থাকবে বড় মামার বাসায়।ঢাকায় যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন শাহেল।রাত্রীর তো দিনই কাটেনা কবে যে ঢাকা যাবে এই ভেবে!মামা আসবেন মামাতো ভাই জনির সাঙ্গে দেখা হবে।অনেক জায়গায় ঘুরবে।কতো যে মজা হবে-এগুলোই শুধু ভাবে।
অবশেষে তারা ঢাকায় এলো।বড় মামার বাসা উঠল।মামী তাদের অনেক আদর করেন।যত্ন করে,ভালো ভালো খাবার তাঁদেরে খেতে দেন।বড় মামা তাদের চিড়িয়াখানা,লালবাগ কেল্লা,যাদুঘর ও স্মৃতিসৌধ ঘুরতে নিয়ে যান।রাত্রী অনেক আনন্দ পেয়েছে এই জায়গাগুলোয় ঘুরে।সে ঘুরতে অনেক ভালোবাসে।পড়ালেখা করতেও ভালবাসে।
গ্রামে এখন অনেক শীত কিন্তু ঢাকায় তেমন শীত নেই।এ ভেবে রাত্রী অবাক হয়!মামাকে জিজ্ঞাসা করে,মামা গ্রামে এখন তো অনেক শীত কিন্তু ঢাকাতে কম শীত কেন?মামা বলে,গ্রামে মানুষের বসবাস কম।গাছপালা অনেক।খোলামেলা মাঠ রয়েছে আর শহরে দেখনা কত মানুষ।গাছপালা তেমন নেই।খোলামেলা মাঠ নেই তাই শহরে শীত কম।
এরই মধ্যে রাত্রীর ছোট মামা দেশে এসেছেন।মামাকে আনতে এয়ারর্পোটে সবাই মিলে একটা গাড়ি রিজার্ভ করে গিয়েছিল।সেখানে রাত্রী দেখেছে কিছুক্ষণ পর পর ওপর থেকে প্লেন উড়ে আসে আর যায়।অনেক শব্দ করে প্লেনগুলো ওরে।আরো কিছুদিন তারা ঢাকায় থাকে এরপর সবাইকে নিয়ে আবার গ্রামে আসে।

লেখা...০৩-১১-২০১৭
প্রকাশ... ০২-০৬-২০১৮ (দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ)পত্রিকায়