মানুষ পৃথিবীর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। আবার সমাজে হীন কর্মকাণ্ড নিকৃষ্ট পশু সমতুল্য। এখানে মানুষকে পশুর সংগে তুল নাও করেছে। আমরা সামাজিক জীব হিসাবে সমাজে বসবাস করি। ভাল মন্দ বুঝার জ্ঞান-বুদ্ধি আছে। পশু থাকে বনে জংগলে সমাজে ভাল মন্দ বুঝার জ্ঞান-বুদ্ধি নাই। কিন্তু কারও সমাজে স্বার্থহানী হলে পরোপকারী ব্যক্তিকেও ভুলে যায়। এজন্য ডক্টর স্যামুয়েল জনসন বলেছেন ‘‘কৃতজ্ঞতা বোধ অনেক কষ্টেই জাগ্রত হয়, সাধারণ মানুষের মতে সেটা আশা করা বাতুলতা” কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ভুলে যাওয়াই মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক। তাই আমরা যদি কৃতজ্ঞতা আশা করি, তার বদলে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।  
একটু ভালবাসা আর স্নেহ পরিবারের কাছে সবাই আশা করে। এটা দাবী করে পাওনা হিসেবে। যদি পেয়ে থাকে নিজেকে কৃতজ্ঞ মনে করে। কিন্তু অনেকে আছে ভালবাসা পাওয়ার পরও অবলীলায় অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। অনেকে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেও অবহেলার শিকার হন। যা স্বামী-স্ত্রী ও প্রেমিক-প্রেমিকার মান অভিমানে ঘটে। আমরা একে ভুল বুঝাবুঝি বলি। এই ভুল বুঝা-বুঝি সঠিক সমাধান না হলে পরিবারে অশান্তির জ্বালা বাড়ে। আর তখনি কৃতজ্ঞ -অকৃতজ্ঞ প্রশ্ন আসে। কারণ একজন মানুষ নিজ স্বার্থে জন্য সম্পর্ক ছেদ করে।  প্রিয় মানুষকে আঘাত দিতে দ্বিধা বোধ করে না। যে আঘাতের কারণে একজন মানুষ সারা জীবনে নিশ্চুপ হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মাসুম বলল ‘মেয়েরা কোন কোন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পুরুষের চেয়েও কঠিন হতে পারে। কোন মেয়ে যদি মুখে একবার ‘না’ বাক্যে কিছু বলে। তাহলে সেখান থেকে সহজে ফিরে না। এক্ষেত্রে ভালবাসার মানুষ কেও ছেড়ে যেতে দ্বিধা বোধ করে না। কিন্তু একজন পুরুষ সহজে তা ভুলতে পারে না। আমি কখনো একথা বিশ্বাস করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সবুজ নামে এক বন্ধু ছিল। সে খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। এজন্য এক মেয়েকে তাকে ভালবাসত। এই ভালবাসা তাদের বেশ কিছু দিন চলে। সেই মেয়েটি মেধাবী বন্ধুকে ছেড়ে যায়। এই কষ্টে সবুজ শিক্ষা জীবন সর্বনাশ হয়।  
আর মেয়েটি আরেক ছেলের সাথে প্রেম-প্রণয় শুরু করে। ছেলেটি খুব মেধাবী ছিল না। সবগুলো পরীক্ষার মধ্যে একটাতে ফাস্ট ক্লাস ছিল। ছেলেটি সবুজের ক্লাস মেট। এসময় সবুজ শত আর্তি করেও তাকে ফি রাতে পারেনি। কোন  মেয়ে এভাবে চলতে পছন্দ করে? কারণ তারা একজন পুরুষের ডিগনিটি দেখে। যার ডিগনিটি বেশি তাকে ভালবাসে।  ভাল করে কারও কাছে রিটার্ন না পাওয়ার আশা করা ‘পৃথিবীতে নিজ আত্মার শান্তির সহজ উপায়’। বাবা-মা নিজ সন্তানকে ছোট থেকে আদর-স্নেহ দিয়ে বড় করেন। যদি একজন সন্তান আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে উঠে। তবে পিতা-মাতা গর্ব বোধ করেন। আমরা বিদেশী সংস্কৃতিতে বাবা-মা’কে বৃদ্ধ বয়সে কোন বৃদ্ধা শ্রমে রাখেন। ইদানীং পত্র-পত্রিকায় দেখা যায় এদেশ অনেক সন্তান বাবা-মা’কে কষ্ট দেন। এখানে বাবা-মার সংগে সন্তানের ভালবাসার মাপকাঠি খুব সহজে বুঝা যায়।
অ্যারিস্টেটলের মতে ‘আদর্শ মানুষ সেই, যে অন্যের উপকার করে আনন্দ পায়, আর অন্যের উপকার করে লাঞ্ছিত হয়।’ কারণ দান করা মহত্ত্বের লক্ষন; আর গ্রহণ করা নীচতা। যদি সুখি হতে চাই; তবে কৃতজ্ঞতা-অকৃতজ্ঞতা ভুলে আনন্দে দান করব। আমরা সমাজের মানুষকে ভালবাসে কোন কিছু দান করি। কিন্তু তার প্রতিদান আশা করলে দুঃখ পাওয়া স্বাভাবিক। আবার দানের প্রকার ভেদ অভিন্ন হতে পারে। তবে কাউকে ভালবেসে মনে দুঃখ পাওয়া একটা দান। এই দান হলো একান্ত ভালবাসা। নিজ আত্মার শান্তি কে বির্সজন দেয়া। যেই মানুষটির কাছে বার বার লাঞ্ছিত হয়। আবার তার কাছে  সান্ত্বনা জন্য ফিরে যায়। সুখে-দুখে উপরকার করে। এই ভালবাসা মানুষের মাঝে দেখা যায়। আবার গৃহপালিত কোন প্রাণী বা বনের পশুও মনীবকে ভালবাসে। এখানে পার্থক্য হলো আমরা মানুষ সহজে কাউকে ভুলে যায়। কিন্তু পশু তার প্রভুকে ভুলে না। একটি পশু তার মনি বের ক্ষতি হতে দেয় না। এক্ষেত্রে মনিব পশুর উপর যত অত্যাচার করুক। তবু মনি বের শ্রত্রুকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এখানে আমাদের ব্যর্থতা।