আমরা শিশু-কিশোর বয়সে পরিবারের স্নেহ ভালবাসা মধ্যে বড় হই। এ বয়সে মায়ের কোল সবচেয়ে নিরাপদ। সুখ-দুখ কী তাও বুঝতে দেয় না।  প্রত্যেক মা-বাবা সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে চিন্তা করেন। আধুনিক বিশ্বের ছোঁয়ায় যারা তাল মিলায়ে নিজ সংস্কৃতি অটুট রাখেন। তারা সন্তানের ভবিষ্যৎ ভাবনায় এগিয়ে। সন্তান যখন কিশোর পেরিয়ে যুবক বয়সে পৌছে। তখন কোন ভাবে সংসারের হাল ধরে। এখানে পরিবারের দায়বদ্ধ জীবন আবদ্ধ হয়। ক্যারিয়ার না হলে জীবন খুব চ্যালেঞ্জিং হয়। জীবনে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার প্রবক্তা কাল মার্ক্স বলেছেন ‘জীবন মানেই সংগ্রাম, জীবন মানেই যুদ্ধ।‘ সুতরাং জীবনে সংগ্রাম করে জয়ী হতে না পারলে জীবন থমকে যায়। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় প্রত্যেকের জীবন নানাভাবে বাঁধাগ্রস্থ হয়।
পিতা-মাতা একজন সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার কথা ভাবেন। কোন সন্তান যদি তা অনুসরণ করে পথ চলে তার ক্যারিয়ার হবেই। কিন্তু যার পরিবার অচেতন। তার সন্তানের সঠিক ক্যারিয়ার কী হবে..? এই পরিবারে জন্ম নেয়া সন্তানটির আশা-আকাঙ্খা থাকে। কিন্তু সঠিক দিক নির্দেশনার অভাবে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার হয় না। তখন সন্তানটি অস্বাভাবিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। যে কারণে প্রত্যেক মা-বাবার উচিৎ শৈশবে সন্তানের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবা। আর সন্তানকে কিশোর বয়স থেকে সেই অনুযায়ী গড়ে তোলা।    
পাড়া মহল্লায় অনেক মেধাবী সন্তান আছে। অভাব অনটনের দরুন তার সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় না। এই জীবন দীনতা তাকে জীবনে আবদ্ধ করে। তার জীবন চলার পথ থমকে দেয়। আবার দারিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করে যারা জীবন ক্যারিয়ার গড়ে তা যেনো গোবরে পদ্মফুল। এজন্য তাকে অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে প্রস্ফূটিত হতে হয়। যখন প্রতিবন্ধকতা ফেলে  প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন সুবিধাবাদী সমাজ তাকে নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করে। সমাজে এরকম জীবন গড়ার মনীষীদের বিরল দৃষ্টান্ত আছে।  
আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় বন্ধুত্বের মাঝে ধনী-গরীবের বৈষম্য আছে। ধনীর ছেলে-মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হলে বেশি দিন টিকে না। যদিও সৃষ্টিকর্তা দুনিয়াতে ধনী-গরীব করে কাউকে সৃষ্টি করে না। কোন বান্দাকে ধন দিয়ে দুনিয়ায় মন পরীক্ষা করেন। আবার কাউকে গরীব রেখে দুখ-কষ্টের পরীক্ষা নেন। এখানে পার্থক্য হলো দুই ব্যক্তির মধ্যে কে সৃষ্টিকর্তার শুকরিয়া আদায় করে। অন্যদিকে যে অহংকারী হয়; সে ধ্বংসের মুখে ধাপিত হয়। এজন্য সর্ব অবস্থায় শুকরিয়া আদায় করা।  
দুনিয়ার লোভ-লালসা ত্যাগ করা উচিৎ। এজন্য জীবনে সব আশা আকাঙ্খা বাদ দেয়া নয়। অন্যের উন্নতি দেখে হিংসা থেকে দূরে থাকা। তার মাঝে ভাল কিছু দেখলে দূর থেকে তার প্রতিযোগী হওয়া। আর জীবন গড়ার জন্য কৌশল অনুযায়ী কাজ করা। সর্বোপরি লোভ-লালসা থেকে বিরত থাকা। প্রবাদে আছে ‘লোভে পাপ; পাপে মৃত্যু’।  কারণ অপ্রত্যাশিত কোন কিছু জীবন ক্যারিয়ার থমকে দিতে পারে। এজন্য যতটুকু প্রয়োজন সেই ভাবে পথ চলা।    
পৃথিবী সৃষ্টি থেকে প্রেম-ভালবাসা শব্দগুলোর সমাজে এসেছে। লোক মুখে প্রবাদ আছে প্রেম স্বর্গীয়। মানুষের মাঝে প্রেম-ভালবাসা থাকা স্বাভাবিক। সৃষ্টিকর্তার ভালবাসার গুণেগুনাম্বিত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর দোস্ত হয়েছেন। নবীর ভালবাসা সমস্ত মুসলিম উম্মার উপর নিহিত। তিনিই আমাদের সাফায়েতের কাণ্ডারি। তুরপর্বত আগুনে পুড়ে সুরমা হলেও মুসা (আঃ) পুড়েনি। নূহ (আঃ) বন্যার প্লাবনে মরেনি। ইউনুস (আঃ) মাছের খেলেও সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে বালু চড়ে উপড়ে দেন। ইউসুফ নবীর প্রেমে জুলেখা পাগল। এসব প্রেম কাহিনী ইতিহাসে কালের সাক্ষী। কিন্তু আধুনিক যুগে প্রেম-প্রণয়ে  পড়ে অনেকে জীবন ক্যারিয়ার গড়তে পারে না।
মানুষ একাকি বাস করতে পারে না। জীবনে চলার জন্য তাকে কারও সঙ্গী হতে হয়। জীবন চলার জন্য একজন ভাল বন্ধুর প্রয়োজন। একজন বন্ধু-বান্ধবী জীবন স্বপ্ন বদলে দিতে পারে। সুতরাং বন্ধু নির্বাচনে কিশোর-কিশোরীদের আরও সচেতন হতে হবে। বন্ধুর উদ্দেশ্য খারাপ থাকলে সারা জীবন ধ্বংস হবে। প্রবাদে বলে ‘‘ সু সময়ের বন্ধু নয়-দুর সময়ে যে কাছে থাকে সেই প্রকৃত বন্ধু”।