সামনে মাস্টার্স পরীক্ষা। শিউলি কোন যোগাযোগ করছে না। ফরাদ তাকে কথা বলার চেষ্টা করে। সে বলছে কারো সাথে কথা বলতে ভাল লাগে না। তাকে অন্য নাম্বার দিয়ে ফোন দিলে ভালভাবে কথা বলে। একদিন তার বন্ধুর ফোনে শিউলি ধরা খেয়ে গেলো। ফরাদ তার প্রতি রেগে গেল। শিউলি র মন খুব খারাপ। সে বলল খেলাটা ভালই খেললে। ফরাদ বিষয়টি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখল। যেনো তাদের সম্পর্কের অবনতি না ঘটে।
ডিসেম্বর/১১ রংপুর পুলিশ কমিউনিটি সেন্টারে ফরাদ এক কনফারেন্সে এল। সেদিন শিউলিকে ফোন দিল। সে ফোন রিসিভ করেই বলল আমাকে একজন ধর্ষণ করেছে। তার মুখে এই কথা শোনে ফরাদ খুব রাগ হলো। আর কান্না জড়িত কণ্ঠে বলল ছেলেটি কে.? আমাকে বল। আমি তাকে জীবন্ত কবর দিব। কারণ সে তোমার উপর জুলুম করেছে। আমি তাকে ছাড়ব না। শিউলি কোন ক্রমে ছেলেটির কথা বলল না। তার ধর্ষণের কথাটি ফরাদ বিশ্বাস করেনি। কারণ তার প্রতি অটুট বিশ্বাস ছিল। সে একদিন বিষয়টি মিথ্যা বলে ক্ষমা চাইল। ফরাদ বলল তুমি নিজের উপর কেন মিথ্যা অপবাদ নিলে। আর কোন দিন আর মিথ্যা বলে আমাকে ভুল বুঝবে না। কারণ আমার মনে যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। আমাকে যদি ভাল না বাস। তবু মিথ্যা অজুহাত দিবে না। আমি তোমার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাব। শিউলি এই কথা শোনে বলল আল্লাহ যদি আমাদের ভাগ্যে জুটি লিখে থাকে তবে হবেই। এতে যত বাধা আসুক না কেন। তার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার সুযোগ দিল না।
ফরাদ ঢাকা কলেজ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষা দিবে। শিউলি তার সংগে কোন যোগাযোগ করে না। প্রথম দিনে পরীক্ষা কিছুটা ভাল হলো। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষা ভাল হলো না। এবার শিউলিকে ফোনে বলল; তুমি এধরণের আচরণ করলে পরীক্ষায় দিব না। আমি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হব। শিউলি এই কথা শোনে তাকে বলল তুমি পরীক্ষা দাও। আমি আছি ভবিষ্যতে তোমারই থাকব।
ফরাদ দ্বিতীয় শ্রেণী মাস্টার্স পাস করল। সুখবরটি শিউলিকে ফোনে জানাল। সে বলল; আমি অন্ততঃ বাঁচলাম। তার কাছে মিষ্টি খেতে চাইল। ফরাদ বলল মিষ্টি সহ বাসায় পৌঁছে যাব। আর প্রেমের বিষয়টি বাড়িতে জানাব। এবার শিউলি বলল; আমাকে জীবন সঙ্গী করলে তোমাকে সরকারি চাকুরী নিতে হবে। এছাড়া আট ভরি স্বর্ণালঙ্কার দিতে হবে। তুমি এসব দিতে পারবে...?
ফরাদ বলল; তোমার কথা মত মাস্টার্স পাস করেছি। আশা করি সরকারি চাকুরী না হলেও প্রাইভেট কোম্পানীতে ভাল কাজ করব। শিউলি বলল তোমার মত মাস্টার্স পাস দেশে ভুরিভুরি আছে। ফরাদের মনে এবার অশান্তির আগুন জ্বলে উঠল।
শিউলি এখনো তার সাথে মাঝে মধ্যে কথা বলে। ফরাদও অনেক দিনদিন পরপর কথা বলে। এভাবে দুজনের মাঝে সম্পর্কের দূরত্ব বাড়ছে। অনেক দিন তাদের দেখা হয়নি। ফরাদ বাড়ি যেতে চাইলে সে মানছে না। শেষ বারের মত ফরাদকে বাসায় যাবার অনুমতি দিল। এখানে একে অপরের কিছু শর্ত থাকল।
সামনে রমজান মাস হাতে সময় নাই। সিদ্ধান্ত নিল ১৩ জুলাই/১২ শুক্রবার তাদের বাড়িতে যাবে। এদিন সকাল থেকে মুশলধার বৃষ্টি হচ্ছে। মনের মিশন-ভীষণ তাকে যেতে হবে। বৃষ্টিতে ভিজে সকাল সাড়ে এগারোটায় নীলসাগর ব্রীজে পৌঁছাল। হঠাৎ শিউলির ফোন তুমি কত দূর..? বলল আধা ঘন্টা সময় লাগবে। তখনো মুশলধার বৃষ্টি পড়ছে। আধা ঘন্টার মধ্যে বাড়িতে পৌঁছে গেল। সারা শরীর বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। রেইন কোর্ট খুলে বারান্দায় শুকাতে দিল।
শিউলি একটি শুকনা তোয়ালে দিল। খালা আম্মা বলল; তোমার তো অসুখ হবে। ফরাদ হাস্য উজ্জ্বল মুখে বলল কিছু হবে না। শিউলি ললিপপ খুব পছন্দ করে। বাজার থেকে কেনা ললিপপগুলো তার হাতে দিল। এছাড়া ‘‘সত্যিই ‘‘স্যাকুলাস’’ একটি গল্পের বই ও কলম দিল। সে কোন কিছু নিতে চাইনি। কারণ এযুগে প্রেমিক-প্রেমিকা নামী-দাবী জিনিস নিয়ে প্রেম থেকে কেটে পরে।
ফরাদ সন্ধ্যায় বাসায় এসে পৌছাল। মনে অশান্তির আগুন জ্বলছে। কারণ শিউলি তাকে চিরদিনের জন্য তার বাড়ি যেতে নিষেধ করেছে। সে একথা বলবে ফরাদ বিশ্বাস করতে পারছে না। ফরাদ তাকে ফোন দিলে নানাভাবে গালমন্দ করে। শিউলি বলে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। ছেলে কোম্পানির চাকুরী করে। ফরাদ কোন ভাবে তার কথা বিশ্বাস করে না। বাড়ির অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা করতে চাইলে শিউলি সম্মতি দেয় না। ফরাদ কিছু দিন শিউলির সংগে কথা বলা বন্ধ করল।
২০১৩ সালে প্রথম রমজান সেহেরীর সময়ে শিউলির ফোন পেল। সেই দিন তাকে কিছু বলেনি। শিউলি দ্বিতীয় রমজানে বলল; আগামী পনেরো আগস্ট বৃহস্পতিবার আমার বিয়ে। এই কথা শোনে ফরাদের দু’চোখের পানি ছল ছলে গড়িয়ে পড়তে লাগল। শুধু ভিজে গলায় বলল তুমি আমাকে জীবন্ত কবর দিলে। এভাবে বাঁচিয়ে না রেখে প্রাণে মেরে ফেলো। এতকষ্ট নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকব। শিউলি তার কোন প্রতি উত্তর দেয়নি।
এবার ফরাদ বলল তুমি সকালে খালাকে ফোনটা দিও। সে কোন ভাবে মা’কে ফোন দিবে না। অনেক তিক্ততার পর ফোন দিতে রাজি হল। ফরাদ সকাল সোয়া নয়টায় ফোনে খালাকে সালাম জানাল। তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন শিউলির বিয়ে ঠিক হয়েছে। তোমার দাওয়াত রইল; অবশ্যই আসবে। ফরাদ কথাটি শোনার পর মনে হলো আকাশ থেকে মাটিতে পড়ল। তার চাপা কান্নায় দুচোখ লাল টুসটুস হলো।
তবু ভালবাসার মানুষটির একটু কণ্ঠস্বর শোনার জন্য ফোন করে। কিন্তু শিউলি তাকে লাঞ্জনা দেয়। তার মনে তুষের আগুন জ্বলছে। সে কোথাও একটু শান্তি পাচ্ছে না। শুধু চোখে মুখে হতাশার ছাপ। তার মন থেকে কী যেন হারিয়ে গেছে। এমন অবাস্তব কল্পনা নিয়ে সারাদিন পথ চলে। অনেকে দেখে সহ সায় বুঝে ফেলে তার কী যেন হয়েছে। প্রতিদিন মনের উৎফুল্লতা আর চাঞ্চল্য হারাচ্ছে। খাওয়া নেয়ার দিকেও নজর নাই। শুধু সিগারেট আর বিড়ি খেয়ে ঘুমায় পড়ে। অল্প দিনের ব্যবধানে শুকিয়ে রোগাটে হয়ে গেল। এই অশান্তির আগুনে তার জীবন স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেলো।#