প্রত্যেক মানুষের জীবনে কিছু ঘটনা থাকে। যা কারো জীবনকে সর্বনাশ করে। এ ঘটনা জংগলের পশু-পাখির জীবনে ঘটে না। আর ঘটলেও মানুষ তা দেখতে পায় না। কিন্তু সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানব সমাজে নিত্য দিনে এ ঘটনা ঘটে। যে ঘটনা একটি সমাজ কে বদলে দিতে পারে। আবার কোন ঘটনা সমাজ কে ধ্বংস করে। অনুরুপ একজন ব্যক্তি সমাজকে তিলে তিলে জ্বালাতে পারে। যার খারাপ প্রভাব পুরো সমাজে পড়ে। কারও মনে সেই ক্ষত প্রকাশ পাই। কেউ কেউ নীরবে সহ্য করে। আর সহ্য করতে না পারলে হতাশায় ভুগে। এভাবে একদিন জীবন সর্বনাশ হয়। একজন কিশোর একটি ফ্রেমে জীবনকে বিকশিত করবে। এই জীবন স্বপ্ন কেউ নিজে খুঁজে নেন। কেউ পরিবার থেকে দর্শন পান। কিন্তু স্বপ্নের ফ্রেম ভেঙ্গে গেলে এলোমেলো হয়। এমন ঘটনা মানব সমাজে অবলীলায়  দেখা যায়। পিতা-পুত্রের মাঝে সম্পর্কের অবনতি। সংসার জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ। মা-মেয়ের মাঝে মনোমালিন্য। আধুনিক সমাজে প্রেম জড়িত ঘটনা। প্রত্যেক ঘটনার একটা জীবন চক্র আছে। দু’পক্ষের ভূমিকা কখনো এক হয় না। কেউ স্বপ্ন দেখে আর কেহ স্বপ্ন দেখার নির্দেশনা দেন। নিজের স্বপ্নে অগ্রসর হলে জীবন সার্থক হয়। তবে স্বপ্ন দেখার মানুষ যদি অভিনয় করে। তবে অবিশ্বাসের জন্ম দেয়। আমরা এমন মানুষকে সরাসরি স্বার্থপর বলি। কিন্তু স্বপ্নের ফ্রেমে গড়ার নামে বিশ্বাস ঘাতকতা করে। তার কী হয়?
বিশু অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। শৈশব থেকে নিজ কর্মের আয়ে লেখা-পড়া চালায়। সালে/০৫ এক প্রতিষ্ঠানে হিমুর সংগে পরিচয় হল। তার সাথে রাত যাপন করল। সমবয়সী দু’বন্ধু এদিন গভীর রাত পর্যন্ত গল্পগুজব কাটাল। এতে জীবনের নানা বিষয় মিল খুঁজে পেল। হিমু বলল আমার দূর সম্পর্কে খালাত দু’বোন আছে। তারা ভাল কথা বার্তা বলেন। বড় আপু অনেক মিশুক। তুমি ফোনে তার সংগে কথা বলিও। বিশু মেয়েদের সাথে খুব কম কথা বলে। এমন কি মেয়েদের সামনে একটি বাদাম খেতেও লজ্জা পায়। হিমুর কথায় তার বেশ আগ্রহ হল। সে বলল তাদের বাড়ি কোথায়?
হিমু বলল তাদের বাড়ি গ্রামে। আমি কোন দিন তাদের বাসায় যায়নি। নুসরাতের নানীর বাড়ি ঘোড়াঘাটে। সেই সম্পর্কে তার খালাত বোন। আমার এক মামা নুসরাতকে পছন্দ করে। তুমি তাদের বাড়ির ফোন নাম্বার নাও। সময় করে কথা বলিও।
বিশু বাড়ি ফিরে এল। একদিন দুপুরে ওই নাম্বারে ফোন দিল। অচেনা এক কিশোরী ফোন রিসিভ করল। বলল কে বলছেন.? কিশোরীর কণ্ঠস্বর খুব মিষ্টভাষিণী। বিশু  সময়ে-অসময়ে তার সাথে কথা বলে। এভাবে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব হল।
সারাদিন ফোন না পেলে রেগে মেগে অস্থির হয়। তখন প্রতি মিনিট কল রেট সাড়ে ছয় টাকা। এই টাকা পাব কোথায়?  নুসরাত তাকে হাজারো স্বপ্নের কথা বলে। তাদের বাস্তব জীবনে পরিণতি হবে। যখন ছেলে-মেয়ে হবে তাদের নাম রাখবে জীম ও মীম। বিশুর স্বপ্ন প্রেম গোটা জীবন বদলে গেল। সে পুরোপুরি তার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ল। তার সিদ্ধান্ত না নিয়ে কোন কাজ করে না। এবার তার শর্ত; আমাকে পেতে হলে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করতে হবে। বিশু লেখা পড়ায় বেশ মনোযোগী হল। এখন তারা গভীর প্রেমে হাবুডুবু খেলছে।
নুসরাত কয়েক মাসের মধ্যে ছবি চাইল। বিশু কিভাবে ছবি পাঠাবে..? মনে হলো ইউনিভার্সিটি অব এ্যাসোসিয়েশন নামের ছাত্র সংগঠনের ম্যাগাজিনে তার ছবি আছে। এই ম্যাগাজিনটি পাঠালে ছবি দেখতে পারবে। নুসরাতের ঠিকানায় ম্যাগাজিন বইটি পাঠিয়ে দিল। এক সপ্তাহের মধ্যে ম্যাগাজিন বইটি নামের পাশে ছবি দেখে নিল। এবার তাকে ফোনে বলল তুমি খুব সুন্দর। আমার চেয়ে বেশি ফর্সা। এখন পারিবারিক জীবনের নানা বিষয়ে কথা হয়। নুসরাত সুকৌশলে তাকে উৎসাহ প্রদান করে। জীবন সঙ্গীর মত স্বপ্ন দেখানো শুরু করল। বিশু স্বপ্নগুলো বাস্তবায়নে স্বচেষ্টায় মগ্ন।  
নুসরাত বাড়ির ফোন ব্যবহার করে। একদিন বলল; ছোট খালামুনি অসুস্থ ঘোড়াঘাটে যাব। সেখানে প্রায় দু’মাস থাকব। তোমার সাথে কোন যোগাযোগ হবে না। একমাস চলে গেল। তাকে দেখার খুব ইচ্ছা করছে।  ১৩ এপ্রিল/০৬ ঘোড়াঘাট বন্ধু হিমুর কাছে গেল। সে স্টেশন থেকে বিশুকে বাড়ি নিয়ে গেল। এখানেও এসেও তার দেখা হল না। #  (অমর একুশে বই মেলা ২০২০ সালে প্রকাশিত ছোট গল্প ‘‘স্বপ্ন ঘেরা’’)