বিজ্ঞানে পড়া শোনা করে। তার তৃতীয় সেমিস্টার চূড়ান্ত পরীক্ষা সামনে। একাডেমিক পড়া-শোনার ফাঁকে বিশ্বখ্যাত দার্শনিকের বই পড়েন। তিথি বয়সে আমার জুনিয়র। কিন্তু তার চিন্তা-চেতনা, আত্মিক জ্ঞান অসাধারণ। সাহিত্য ও দর্শন জগতে তার জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত। আমার সাথে তার পরিচয় অনেক আগে থেকে। আমি তাকে বেশ স্নেহ করি এটা জানে না। হঠাৎ একদিন সেন্টারে এসে বসল। আমাকে তার মনের চিন্তা-ভাবনাগুলো শেয়ার করল। আমি তার কথাগুলো শোনে বাহবা দিলাম। অবশ্য কিছু প্রসাঙ্গিক বিষয়ে পরামর্শ দিলাম। আমার পরামর্শ গুলো সে লুফে নিল। এখন যাবার পালা।
আমার কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টারের ছোট লাইব্রেরীর দিকে তাকাল। পরক্ষনে একটি বই পড়ার জন্য চেয়ে নিল। সে বলল বেশ তো আপনি আমার পছন্দের লেখকের বইগুলো পড়েন। এক প্রসঙ্গে তিথি বলল আপনি তসলিমা নাসরিনের ‘ক’ বইটি পড়বেন। আমি বললাম যারা উগ্রবাদী চিন্তা-চেতনা নিয়ে কিছু লিখেন। সেই লেখকদের বইগুলো মানার জন্য নয় বরং জানার জন্য পড়া দরকার। কারণ তাদের লেখার মধ্যে বেশ কিছু ভাব গাম্ভীর্য আছে। সে পরের দিন তসলিমা নাসরিনের ‘ক’ বই টি পড়ার জন্য দিয়ে গেল। আমি মনোযোগ দিয়ে বইটি পড়া শুরু করলাম। কিন্তু সময়ের অভাবে বইটি ভালভাবে পড়তে পারিনি।
তিথির মন খারাপ থাকলে আমাকে ফোন করে। আমি সময়ের অভাবে তার খোঁজ খবর নিতে পারতাম না। তবে সুযোগ পেলে ফোনে ভাল মন্দ জেনে নিতাম। কখনো উত্তরে বলত ভাই বেশি ভাল নাই। কারণ বাড়ি থেকে দূরে এসে পড়াশুনা করছি। সবাইকে বাড়িতে রেখে একাকি ভাল লাগে না। আমি তাকে বললাম একটু কষ্ট কর; ভবিষ্যতে সুখ পাবে। একদিন রাতে তিথি বলল ভাইয়া আমার পরীক্ষা শেষ। আমি আজ খুব ব্যস্ত। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কী এমন ব্যস্ততা। সে বলল এতদিন যাদের ফোন করিনি। আজ তাদের মিসকল ও কল দিয়ে স§রন করছি। তার পরীক্ষার কেমন হল খোঁজ নিলাম। আমাকে বলল পরীক্ষা বেশ ভাল হয়েছে। আমি পরীক্ষা ভাল হবার খবর শোনে খুশি হলাম।
একদিন তার মুখে বিয়ের কথা শুনলাম। তবে বর অন্য কেউ নয়। সেই বর হবে আমার বন্ধু মহলের একজন। আমি তার কথায় কৌতুক করে বললাম তোমাকে খুঁজতে হবে না। আমিই তোমার জন্য বর খুঁজব। সে আবারও বলল আপনি আমার জন্য দেখবেন..? আমি তাকে হাসি-মুখে বললাম তুমিও ভেবে দেখ। এবার তিথি বলল আপনি সহ আপনার বন্ধুরা তো আছে। আপনার বন্ধুদের মধ্যে অনেকে বিয়ে করেছে। আপনি বিয়ে করেন না কেন..? আমি তার মুখে প্রশ্নগুলো শুনে হাসলাম। তাকে বললাম বিয়ে করব। কিন্তু কোন মেয়ে বেকার ছেলেকে বিয়ে করতে চায় না।
তিনি এই বার কয়েকজন বন্ধুর নাম বলল। ভাই কাকে বিয়ে করলে ভাল হবে। সে বন্ধুদের মাঝে একজনকে খুব পছন্দ করে। আমাকে তার নাম বলল না। তবে আমার এক বন্ধুর প্রশংসা তার মুখে অনেক শুনেছি। আমার সে বন্ধুও ভেটেরিনারী পড়াশুনা করে প্রথম শ্রেণির ক্যাডার হয়েছে। আমার বন্ধু খুব মেধাবী। এছাড়া সৃজনশীল চিন্তা শক্তির অধিকারী। যে কারণে তিথির খুব পছন্দ। এখানে সমস্যা তার পরিবার বিয়েটা মেনে নিবে না। সে বলল আম্মা আগে থেকেই না বলছে। আর আব্বা যদিও হ্যাঁ বলেন; তবু মা’র ব্যাপারটি আমার কাছে খুব চিন্তার। যদি মা সহমত পোষন করে তাহলে বিয়ে করব; নচেৎ করব না। আমি বিয়ে সম্পর্কে তার কথাগুলো একক চিত্তে শুনলাম।
আমি বললাম তুমি অবশ্যই আব্বা-আম্মাকে ম্যানেজ করে বিয়ে করবে। কারণ তোমার প্রতি পরিবারের অনেক চাওয়া পাওয়া আছে। তিথি আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ নীরব রইল। সে বলল আমার বন্ধু তাকে সব কিছু শেয়ার করে। তবে কথায় কী মানুষ চেনা যায়?
আমাকে বলল; ভাইয়া আপনি কী বলেন। আপনার বন্ধু কী খুব খারাপ হবে..? আমি বললাম সে খুব ভাল ছেলে। তিথি মানিকে মানিক চিনে-যতনে রতন মিলে। সে বলল আমি তো মানিক নয়। আমি বললাম ভেবে দেখ তুমিও রতœ। কারও মনে ভাল লাগলে তাকে কেউ ফেরাতে পারে না। স্বয়ং বিধাতা যদি না ফেরায়। অবশেষে বিয়ে হলো কি না। আমি জানার অপেক্ষাই থাকলাম। # অমর একুশে বই মেলা ২০২০ এ আমার প্রকাশিত ছোটগল্প ‘‘স্বপ্নঘেরা’’ বই।