নাবিল একাদশ শ্রেণির ছাত্র। এখন তার বয়ো সন্ধিকাল শেষ হয়নি। এ বয়সে হাতে মুঠোফোন পেয়েছে। হর হামেসা নতুন কোন নাম্বারে ফোন আসে। একদিন এক কিশোরীর ফোন পেল। কিশোরীর কণ্ঠস্বর খুব সুন্দর। প্রথম দিনে কথা বলে তার কণ্ঠে আকৃষ্ট হল। এদিনের পরে প্রায় সময়ে তার সাথে কথা বলে। সে তখনো কিশোরীর নাম ঠিকানা জানে না। অপরিচিত নাম্বারে কথা শোনে প্রেমে পড়ে। সে বুঝেনি বাঁকা পথে পা বাড়ল। তার মনের বিশ্বাস কিশোরী কোন দিন প্রতারনা করবে না। রুপা রাজশাহী আদর্শ কলেজে পড়ে। তার বাবা বে-সরকারি প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। এক পর্যায়ে তাদের প্রেম প্রণয় গভীরে পৌছে।
নাবিল একদিন রুপাকে ফোনে বলল তুমি আগে সম্পর্ক করেছ। সেদিন তার সোঁজা সাপ্‌টা উত্তর না। সে সরল মনে তার কথা বিশ্বাস করে। ২৬ জুলাই/১৩ গভীর রাত; রুপা ফোনে তাকে বলল তোমাকে সত্য কথা বলিনি। এখন শোনলেও তুমি কষ্ট পাবে। আমার কিছু করার ছিল না। এখন সত্য ঘটনাটি বল। নাবিল কোন ঘটনা। রুপা কোন ঘটনা নয়; তোমার প্রেম কাহিনী। এবার নাবিল বড্ড একটা হাফ ছাড়ল। রুপা তুমি কী বলছ! কেন সেই ছেলেটি তোমাকে ব্যথা দিয়েছে। তার বাড়ি কোথায়..? নাবিল বলল; আমার  মনে প্রতিজ্ঞা ছিল জীবনে একজনের সাথে প্রেম করবে। আর তাকে জীবন সঙ্গী করবে। তুমি আমার আত্মবিশ্বাস ভেঙ্গে দিলে!
এবার রুপা প্রথম প্রেম কাহিনী বলতে লাগল। বলল আমি সবে মাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছি। একদিন অচেনা নাম্বারে ফোন আসে। তখন থেকে ওই নাম্বারে নিয়মিত কথা বলি। কোন দিন তাকে দেখিনি। এভাবে তার প্রেমে পড়ি। আমার এই প্রেম চলে গোটা তিন মাস। যখন অচেনা প্রেমিকের ভালবাসায় হাবু-ডুবু খাচ্ছি। সে একদিন  ফোনে জানাল বিয়ে করেছি। আমি এ কথা শেনোর পরে ভীষন অসুস্থ হই। আমার চিকিৎসার জন্য শরীরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি। কিন্তু  ডাক্তার কোন অসুখ পায়নি; শুধু বাবাকে বলেছেন আপনার কন্যা মনে প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছে। সুস্থ হতে কিছু দিন সময় লাগবে। আমি এ ঘটনার কারণে পরীক্ষায় ফেল করি। তোমাকে বাবা-মা মেনে নিবে না বলে নানান মিথ্যা সাজিয়ে গুছিয়ে বলেছি। আমাকে যেনো মন থেকে ঘৃণা কর।
৩১ শ্রাবণ/২০ রোজ শুক্রবার রুপার বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। নাবিলকে ২৯ শ্রাবন দুপুরে রুপার বাবা ফোনে নিমন্ত্রন দিল। একজন পিতার সম্মান রক্ষার্থে শত যন্ত্রণার মধ্যে ৩০ শ্রাবণ গিয়ে দেখা করল। এদিন রুপা তার সাথে যতসব কথা বলার চেষ্টা করল। নাবিল দুপুরে করতালী জামে মসজিদে যোহর নামাজ আদায় করল। মসজিদ থেকে বাড়িতে ফিরলে এক মামার সংগে তাকে খাইতে দিল। তার খেতে ইচ্ছে করছে না। শুধু থালায় ভাত নাড়া-চাড়া করছে। রুপার পরিবার যেন কোন কষ্ট না পায়; আল্লাহর কাছে মনে প্রাণে প্রার্থনা করছে। ভাবছে ধৈর্যের সীমা অতিক্রম হওয়ার আগে চলে যাবে। এবার রুপার মা এক থালা পাইস ও মিস্টি এনে দিল। সে মিস্টি কেটে প্রথমে রুপাকে আর বাকী অংশ ভাবী, খালামুনি ও ছোট বোন দের খাইয়ে দিল। নাবিল বিদায় নিল। এসময় রুপার চোখের জল ছলছল করে দু’গাল দিয়ে গড়ায়ে পড় ছিল।  
রুপার পৌরসভা কমিউনিটি সেন্টারে ধুমধাম বিয়ের আয়োজন চলছে। সকালে ফোনে বলল আমার খুব খারাপ লাগছে। নাবিল বলল তুমি এখন মন খারাপ কর না; হাসি খুশি থাক। এবার রুপা বলল; তুমি আমাকে অবিশ্বাস কর না। আমি শ^শুর বাড়ি থেকে ফিরানি এসেই কথা বলব। আর এক দেড় মাস পরে শ^শুর বাড়ি থেকে যোগাযোগ করব। বিকাল পনে পাঁচটায় বউ সাঁজব। আত্মীয়রা আমাকে কমিউনিটি সেন্টার নিয়ে যাবে। সব শোনে নাবিল ভিজা গলায় বলল; তুমি আমার সংগে বিশ্বাস ঘাতকতা করলে! ভালবাসার নামে নয় বছর টাইমপাস করলে? আমার স্বচ্ছ মনের সংগে প্রতারণা করলে?  রুপা এতসব প্রশ্নের উত্তর দিল না।  #   (অমর একুশে বই মেলা ২০২০ আমার প্রকাশিত ছোট গল্প বই ‘‘ স্বপ্নঘেরা’’)