এই বৈশাখ! তুই আমাদের ছোট বেলায় ছিলি একলা
কীর্তনডাঙার মাঠে বসত চড়ক সংক্রান্তির মেলা,
চারদিকে দেখা যেত বিগ্রহ,আর শিবের গাজন।
নীল পুজোর না-শুকনো শিলা
বসত কত না ঢাকিদের মেলা।
বয়েস বাড়লে বুঝতে পারলাম একলা বৈশাখ
হয়ে গে ছে পহেলা।
মেলার মাঠে ঢাকের বাজনায় ছিল কত ভয় ভালোবাসা
খাজা-গজা-জিলিপি, মনোহারী দোকানী
চুড়ি মালা ফিতের পসরা আরো বৈশাখের বাতাসা।
হয়তো তখনো সে আসে না কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব নিয়ে
পাশের পাড়ায় চলছে উলু ধ্বনি সম্ভিকার বিয়ে ।
সারা দিন ছিল মেলার ভেতর পয়লা বৈশাখ,
শুনেছে চারদিকে হৈ চৈ নট কিশোরের ডাক
দেখেছে নট-বালকের বাহিনী,
শুনেছে গোঠের রাখালের কীর্তি কাহিনী।
খোল করতাল যোগে গ্রীবাভঙ্গি করে,
যদি অনন্য -অন্যরকম বৃষ্টি নেমে আসে
হারিয়ে যেতাম সবাই সত্যি কাল বৈশাখে।
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি ঝরতো যদি,
তৃপ্ত হতো বৈশাখ,
তুষ্ট হতো শিব ঠাকুরের গদি।
কীর্তনিয়ার দোলা খেতো ভেজা ছোলা আর আখের গুড়।
কানাই -এর দল ডাকতো শিব ঠাকুর শিব ঠাকুর।
বাড়ির উঠানে আসত যখন কানাই-এর দল
মা পিসিমারা ঘড়ায় করে ঢেলে দিতো জল
অবাক বিস্ময়কর! কি এক উদ্ভট চল।
সেই জলে সিক্ত হত কীর্তনীয়াদের ধূলি মাখা পা,
তাদের জন্য থাকত
লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে আসা পথিকের জিরান শালা।
জলসত্র গুড়ের বাতাসা মাটির কলসে রাখা
‘কাল ছিল ডাল খালি / আজ ফুলে যায় ভরে/
বল দেখি তুই মালি/ হয় সে কেমন করে?’-
কে বলেছিল এই প্রশ্ন করতে করতে
নট কিশোরেরা ধীরে ধীরে মিশে যেতো মানুষের ভীড়ে।
একলা বৈশাখ ও কেমন করে মিশে গেলো আজ
পহেলা বৈশাখে।
(Wednesday, February 12, 2020, 1:15 AM
©®মৌ মধুবন্তী, ২০২০, টরন্টো-কানাডা-পৃথিবী)