. গঙ্গাসাগরমেলা
জয়শ্রী কর
ঠিক করেছে দাদা একাই যাবে সাগরমেলা
ছোটো ছেলে বাধা দিতেই এল সকালবেলা।
যাবি রে বোন গঙ্গাসাগর
শুনেই হাসে আমার নাগর
বাড়ি এসে ডাকছে দাদা যায় না আর্জি ঠেলা।
এমন সুযোগ মিলবে না আর, বলছ যখন যাব
তোমরা দুজন সঙ্গে গেলে আমিও সাহস পাব।
জলপথে হালকা বোঝা
সাত ঘন্টায় দ্বীপে সোজা
ঝলমলে রোদ দুপুরবেলা লঞ্চে বসে খাব।
দুজন যাবি, শুনে আমার হৃদয় গেল ভরে
বাকি মাত্র কয়েকঘন্টা বেরিয়ে যাব ভোরে।
বউমণিকে সঙ্গে নেবে
ঠাকুরজামাই সামাল দেবে
ভালোবাসার বন্ধনে আজ কাটবে মজা করে।
ঠিক সময়ে রওনা হলাম লোকালে চারজনে
স্টেশন থেকে গেলাম ঘাটে পুলক জাগে মনে।
খেয়াল হল অনেক পরে
দাদার টিকিট দু'নম্বরে !
বলল দাদা, যাচ্ছি টা-টা, হল না একসনে।
বউদিমণি ভাবছে বসে আমায় দিল ফাঁকি
পাশে ননদাই ননদিনী, রইবে ও' একাকী।
চলছে দুটোই পাশাপাশি
ভর্তি জাহাজ চলছে হাসি
কেউ বা আবার হাতছানিতে করছে ডাকাডাকি।
দ্বিপ্রাহরিক আহার শুরু খুশির জোয়ার প্রাণে
খাবার পরে শিল্পী ক'জন মাতায় গানে গানে।
জাহাজ ঘিরে নজরদারি
কড়া নিয়ম হুকুম জারি
একই সূত্রে বাঁধা জীবন সাগরমেলার টানে।
জাহাজ এসে ভিড়ল ঘাটে সবাই গেল নেমে
বউদিকে না দেখতে পেয়ে যাচ্ছে দাদা ঘেমে।
ভুগছিল যে হাঁটুর বাতে
আনল খুঁজে ছিল ছাতে
জলোচ্ছ্বাসের জলতরঙ্গ তখন গেছে থেমে।
ঘাটের থেকে আমরা সবাই চলেছি একসাথে
আপ্যায়নে নেইকো ত্রুটি, দায়িত্ব ঠিক হাতে।
পৌঁছে গেলাম সাগরমেলায়
ঘুরছি পথে রাতেরবেলায়
রাত বারোটায় হুড়োহুড়ি স্নানের লগন প্রাতে।
ভবঘুরের মতোই দাদা কাটায় অগোচরে
বউদি আমি একটু পরে ফিরছি রাস্তা ধরে।
রাস্তাজুড়ে আলোর মেলা
চলতে গিয়ে পাচ্ছি ঠেলা
হন্তদন্ত হয়ে দাদা ফিরছে তখন ঘরে।
সাগরে স্নান হয়নি আমার তোমরা কোথায় ছিলে?
চলো আবার সাগরচরে ডুব দেব সলিলে।
'স্নান না করে যাবি চলে
কেন এলি সদলবলে?
সাগরবেলায় রাত কাটাব বসে সবাই মিলে।'
চন্দ্রালোকে জলের নূপুর আসছে ভেসে কানে
লঞ্চে বসা মানুষগুলোর ছবি যে সবখানে।
দেখছি বসে ভোরের আকাশ
লাগছে গায়ে শীতল বাতাস
জনস্রোতে গা ভাসালাম ফিরতে মন না টানে।
© জয়শ্রী কর