* অদৃষ্টের কী পরিহাস
জয়শ্রী কর
অতি কষ্টে জীবন কাটে নালার ধারে আমার বাস
ভিক্ষে করে দিন চলে যায় অদৃষ্টের কী পরিহাস।
বেরোই আমি মাকে বলে
ঘরে ফিরি সন্ধে হলে
এমনি করে কষ্টেসৃষ্টে কাটে বছর বারো মাস
ভিক্ষে করে দিন চলে যায় অদৃষ্টের কী পরিহাস।
পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে দুঃখের মাঝে জাগাই সুখ
ভর্তাবিহীন এ' সংসারে ধুকুসপুকুস আমার বুক।
ভাঙা হৃদয় ঢেকে রেখে
ফুলের হাসির পরশ মেখে
দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে জোগাই ওদের মুখের গ্রাস
ভিক্ষে করে দিন চলে যায় অদৃষ্টের কি পরিহাস।
ঝুলি কাঁধে হাতটি পাতি দেখি কারও বন্ধ গেট
শুনি কত গালিগালাজ প্রহর গুনে ভুখা পেট।
চেয়ে থাকি মুখের পানে
কী যে কষ্ট মনই জানে
আঁধার নামে দুচোখ জুড়ে ঝাপসা দেখি নীল আকাশ
ভিক্ষে করে দিন চলে যায় অদৃষ্টের কী পরিহাস।
পথের পাশে চালাঘরে বৃষ্টি-ভিজে কাটাই দিন
ভালো করে ছাওয়ার আশা এক পলকে হয় বিলীন।
চড়ে না রোজ ভাতের হাঁড়ি
অঙ্গ ঢাকে ছিন্ন শাড়ি
অন্তরে যে কতো জ্বালা চেপে রাখি নেই প্রকাশ
ভিক্ষে করে দিন চলে যায় অদৃষ্টের কী পরিহাস।
বৃদ্ধা মাতা বিছানাতে এটাই মায়ের বৃন্দাবন
কেমন করে সুস্থ রাখি ভেবে ভেবে ব্যাকুল মন।
চরণ ছুঁয়ে বারেবারে
সংগোপনে ডাকি তাঁরে
একটু দয়া করো মাগো কেমনে চাপি দীর্ঘশ্বাস
ভিক্ষে করে দিন চলে যায় অদৃষ্টের কী পরিহাস।
রৌদ্রে পুড়ে মাল কুড়িয়ে ছেলেটা দশ টাকা পায়
যাচ্ছে কেটে কীভাবে দিন সত্যি বড় অসহায়।
বিয়ের যোগ্য পাত্রী ঘরে
ভেবে আমার অশ্রু ঝরে
বাবুর বাড়ি বাসন মাজে মেয়ের শূন্য অবকাশ
তোমরা আমার দৈন্য দেখে করো না আর পরিহাস।