আজও নাগাল পাইনি পাখিটার
- আবদুল মতিন
ছোটো বেলা থেকেই একটি পাখির খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছি
- যখন কিছুটা বুঝতে শিখেছি, ঠিক তখন থেকেই।
সেই ছোটো বেলায় -
কাদা পানিতে মাখামাখি খেলার মাঠে,
পাসের সবুজ ধানের ক্ষেতে,
বর্ষায় থৈ থৈ গায়ের ছোট নদীটির বুকে;
আর আজকের এ বেলায় -
শহরের লাল-নীল বাতির আলো-আঁধারিতে,
স্বপ্নীল মায়াকাননে, খুঁজছি আর খুঁজছি তায়;
তবু সাক্ষাত মেলেনি পাখিটার।
খোঁজেছি তারে ছোটোবেলার বন্ধুদের আড্ডায়,
খোঁজেছি ভরা যৌবনের ভাঁজে,
আজও খোঁজে ফিরছি এই পঞ্চাশের পরে।
খোঁজেছি হাটে, খোঁজেছি বাটে,
খুঁজছি হেথা খোঁজেছি হোথা
কিন্তু হায় - পাইনি এখনো, পাইনি তারে।
পাখিটা এক বিমূর্ত ছায়া যেন,
অদৃশ্য ডানা মেলে কোথায় কোথায় উড়ে বেড়ায়,
দৃষ্টিতে আনার হাজারো চেষ্টা তাই কেবলই বিফল।
ছোটো বেলায় বলেছিল ওস্তাদ, গুরুজনে
- কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে;
সেই থেকে ওলটপালট করেছি
পরতে পরতে থিতু হয়ে থাকা সব কঠিন পাথর,
কিন্তু হায় কেষ্টের দেখা না মেলে।
হেথা - হোথা খোঁজাখুঁজিতে যখন ঘর্মাক্ত কলেবর,
মন বলে - মিছে কেন খোঁজ তারে!
তোমার খোঁজে ফেরা পাখি আর কেষ্টতে আছে মাখামাখি;
পাখিটাকে খোঁজ আগে, কেষ্টকে পাবে তারই পিছে।
খোঁজাখুঁজির পালাতেই পদ্মা মেঘনায় গড়ালো অনেক জল,
মেঘে মেঘে কাটলো বেলা,
জীবনের চক্রে ঘটেছে মেলাই পরিবর্তন,
- বিয়ে হলো, বাচ্চা-কাচ্চা হলো,
চাকরি হলো, আয় রোজগার হলো,
ছোট্টো একটা ঠিকানাও হলো,
সুনাম-সুখ্যাতিও হলো কিছুটা;
কিন্তু অধরাই রয়ে গেলো পাখিটা।
জীবনসঙ্গীর মাঝে পেয়েছি ভালোবাসার ছায়া,
সন্তানেদের দিয়েছি স্নেহ অকাতরে,
দেয়া-নেয়ার ছলে গড়েছি এক মায়াজাল,
সুনাম-সুখ্যাতিতে অনুভব করেছি জলুস;
কিন্তু সেই পাখিটার দেখা পাওয়া গেলোনা
- পাওয়া গেলোনা এসবের কিছুতেই।
পাখিটার স্বরূপ জানা হলোনা আদৌ,
মনের মাধুরিতে এঁকেছি তাকে নিজের মত করে,
আকর্ষণটা তাই কমেনি কভু বাড়িয়াছে সময়ের ফেরে।
এত খোঁজাখুঁজি, হন্যে হয়ে ছোটাছুটির পরেও পাইনি যারে,
কি হতে পারে তার পরিচয়?
যাকে চিনি না, জানি না, দেখিনি কোনোদিন
তার আবার পরিচয়!
তবে ঠিকানা একটা আছে বটে,
- মনের গহিনে তব অচিনপুরে তার বাস,
তাইতো নাগাল পাইনি, আজও নাগাল পাইনি পাখিটার।।