হে অনাহুত শালিক- সময়ের মেধাবী সন্তান,
আমাকে একফোঁটা ব্যথাহত হৃদয়ের নির্মল বিষ দাও, আমি তোমাকে একটি মনুষ্য-আয়ুর সমান জীবন দিবো!
যে জীবন প্রেমসন্ধিহীন- শোকাবহ পাখির কোলাহলে মুখরিত অথবা বিরহবিধুর হৃদয়ের মতো স্তব্ধ গম্ভীর!
এইসব ক্লান্তি দহন রক্ত-প্রদাহে যে দগ্ধ কণিকা,
দিনান্তের সূর্যকে দিয়েছি আমি- গোধূলির নরম নদীকে- তারকার দহনে বিপুল আকাশ হয়ে গেছে ছাই;
তবু কালসিন্ধুর তীরে সকল কিছুই যেন ঊর্মির মতো ফিরে ফিরে আসে বারংবার।
হে ছলাময় শালিক- সময়ের বিচিত্র সন্তান,
আহতের বুকে এক ভয়াবহ শান্তিকে নির্দেশি-
নিখিলের অনন্ত-ব্যাপ্তির মাঝে- সুদূর আকাশের নক্ষত্রকে কাছে ডেকে- ভুলে যায় একটি নিকটতম মৃত্যুকে অপেক্ষমান রেখে মানুষ তার নিরর্থক জীবনকে মিছে এক অর্থ দিয়ে যেতে চায়!
যে জীবন নিজেরই বেগে নিজে ধায়-
মরণের গোলকধাঁধার পারে- একটি দুর্জ্ঞেয় রহস্যকে ভেদ করে- অন্যএক সত্যে উপনীত হয়ে ফের,
হয়তো অনন্ত অন্ধকারের ভেতর আলোকের মৃদু স্পন্দনের মতো প্রাণ তার নিজের স্বাতন্ত্র্যবোধে জেগে রবে চিরকাল- অসীম শূন্যতার ঘোরে!
অজ্ঞাত নিঃশব্দতার মাঝে মহা-জনশূন্যতায় মানুষের চেতনার স্বল্পজ্ঞান-বিহঙ্গের বুকে
ব্যোমের মতন ব্যাথা দিয়ে- স্ফুলিঙ্গের মতো জাগিয়ে তোলে,- সময়ের জ্ঞানময় প্রবীণ পুরুষটি শালিকের বেশে- ওপারে দূর নেপথ্যের থেকে সৃষ্টির প্রথম পাণ্ডুলিপি ল’য়ে করে উড়াউড়ি!
তবু কালের আবর্তে প্রতিহত পৃথিবীর সব জ্ঞানপাপী মৃত-মনিষীরা নিজেদের চেতনার কণা ধরে
মরণের চির স্তব্ধতা ভেঙে দিয়ে কোথাও
ঘোর তিমিরে প্রেতস্তব্ধ গৃহে নিজেকে পায় যদি সামান্যতমও টের,
তবে এই মহাকাল ঘুরে এসে সৃষ্টির নিগূঢ়তম- চুড়ান্ত অর্থটি খুঁজে লবে তারা?
অথবা জীবন যে মৃত্যুর সংগমতাড়না এড়াতে পারেনি কভু- সেই ব্যর্থতার পিছে একটি মহত্তর মানে ছিলো বলে জানা যাবে একদিন?
হে চিন্তাশীল শালিক- সময়ের জ্ঞানময় সন্তান,
আমাকে একফোঁটা ব্যথাহত হৃদয়ের নির্মল বিষ
অথবা জ্ঞান যে অমৃতের ভিক্ষালব্ধ ধন সেই দীনতা ঘুচিয়ে দাও;
আমি তোমাকে নিখিল খাচার থেকে মুক্তি দিবো!
আমার হৃদয় এক জ্ঞানপাপী পাখি- পাখায় লেগেছে দুরন্ত-কালের বেগ,
আমি যেন ক্ষণিকের সারথি তার- গতির মতোই দিয়েছি তারে আবেগ।।