হায় স্থবিরতা, পৃথিবীর বয়সিনী নারীদের ক্লিন্ন শরীর তোমারে পেয়েছে টের-
তাহাদের ধূলিসাৎ যৌবনের গাঢ়তর ম্লানতার ভেতর।
বড় ক্ষমাহীন তুমি হে স্তব্ধ-সময়,
ছলাময়ী প্রিয়ার মতই নির্দয়।
এই পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণের ব্যথা বিচ্ছেদের থেকে শুরু করে,- মৃতদার পুরুষের বুকে তুমি জ্বেলে দাও আহা তার মৃতপর বধূটির দুর্বহ চিতা।
হায় স্থবিরতা,
বড় নৃশংস তোমার এ আগুনের মতো ব্যাথাদায়ী প্রচণ্ড হাত;
কখনো বিধবার বুকে নিঃশেষে ঢেলে দাও দুঃসহ বৈধব্যের বোঝা; সন্তানের কাঁধে তার বয়োজ্যেষ্ঠ পিতার লাশ, কখনোবা পিতার কাঁধে তার বয়সিনী মাতার মৃতদেহ চাপিয়ে দিয়ে বড় ভয়াবহ দৃশ্যের জন্ম দাও!
হায় স্থবিরতা,
এতো পীড়া-এতো নিশ্চলতা-এতোই নির্মমতা তুমি জানো?
এতো সাধ-আহ্লাদ-প্রেমের হর্ষ-উৎসব-কলরোল
হৃদয়ে যে স্বপন পারের ডাহুকী উদগ্র উতরোল!
তারে ছেড়ে- তাহাদেরে ছেড়ে, সবকিছু ছেড়েছোড়ে একদিন আমাদের মন,
ধরা দেয় তোমারি আততায়ী হাতে;
দিনান্তের শেষ খেয়াপারে ঘাটে এসে দাঁড়ায় যে বিদঘুটে ভিখারি
যার সাথে মানুষের নেইকো পরিচয়,
সেই অচিনরে চেনাও তুমি;
যে নাছোরবান্দা ভিক্ষাপাত্রে তার মানবসন্তান নিয়ে ফিরে!
হায় স্থবিরতা,
জীবনের-যৌবনের এইসব অমোঘ সত্য ল’য়ে আবর্তিত হয়ে যায় কাল;
তবু আশায় আহত সূর্য সনাতন- প্রতিদিন একটি করে প্রতিজ্ঞা ভেঙে,
মানুষের তরে তার মানুষীর হৃদয়ে নিয়ে আসে অপূর্ব আলোর বৈকাল।
তাও হায় নিমেষে ফুরায়, নিমেষে ফুরায়;
সতৃণ ফুলের মতন মানুষীর রূপ- রূপ ল’য়ে রূপসীরা করে যে খেলা,
তাহাদেরো একদিন ফ্যাকাসে হয়ে আসে সোনালী বেলা।
জীবনের তপ্ত উঠানে এই যৌবনের সূর্য সনাতন নয়,
তাহারও ব্যপ্তি এক আয়ুর ভেতর নিত্য ফুরায়।
তারপর রূপহীন, রূপ নেই বলে তার মেয়েলি অহংকার
বিচূর্ণ বিনয়ের জলে ধুয়ে দেয় ফেলে।
এই বলে মনীষা ডুবে যায় কালের অতলে।