নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা ও তালতলা লেনের সেই বাড়িটি
---------------------------------------

লেনিন স্মরণী দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কিছুদূর
ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিট।
কোলকাতায় আমি সাধারণত ওখানটায়ই উঠি
কুমার সিং হলের সামনে কবি সঞ্জয় সাহার হলিডে হোমে।
কমরেড গোপাল কৃষ্ণ কর বললেন,
এখান থেকে দু'কদম এগোলেই
৩/৪ সি তালতলা লেনের সেই বাড়ি
যেখানে কমরেড মোজাফ্ফর আহমেদের সাথে
থাকতেন নজরুল।
তারপর তালতলা স্টপেজ থেকে
একটু সামনে এগোলেই একটি ফলক,
গা ছমছম করে উঠলো-
"এখান থেকে কয়েকপা গেলেই পাওয়া যাবে
৩/৪ সি তালতলা লেনের বাড়ী
সেখানে কবি নজরুল রচনা করেন
তার যুগান্তকারী কবিতা
বিদ্রোহী
তালতলা নজরুল জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটি
২৪ এপ্রিল ১৯৯৯"
আমার ধমনি শিরায় বিদ্রোহের রক্ত
প্রবাহিত হতে থাকলো।
গোপাল দাকে বললাম, যাবো
: কোথায়?
: ওখানে, বিদ্রোহের সূতিঘরে
গোপাল দা বললেন, এখন হবে না
আমার ভীষণ কাজ পড়ে আছে
অন্য একদিন যাবো খন।
গোপালদা চলে গেলেন
আমার ত্রস্ত পা'দুটো আস্তে আস্তে করে
এগোতে থাকলো সামনের দিকে।
দূরত্বটা কম হলেও, মেজাজটা চড়িয়ে দিলো
বেশরম কিছু লোক।
জিজ্ঞেস করতেই বলে, চিনিনা
কোথায় কোন নজরুল থাকতো কি না থাকতো-
একজনকে ধরে এনে দেখালাম, এ ফলক লিখেছে কে?
চিনোনা এখানে থাকো কেনো?
একজন চিনতে পারলো বটে
বয়সটা তাঁর শতবর্ষ ছুঁইছুঁই।
হাতের ইশারায় দেখালেন
আরেকটু এগোও, তারপর হাতের এদিকে-
ওখানে তো দেখার মতো কিছু নেই,
কেনো যাবে?
তারপরও গেলাম, বাড়ির সামনে আরেকটি ফলক
তার সামনে পার্কিং করা কতোগুলো গাড়ি
একজন পৌরসংস্থার জলের পাইপ দিয়ে
গাড়ি পরিস্কার করে নিচ্ছে।
আদ্যোপান্ত বলে তবে জিজ্ঞেস করলাম,
দাদা বাড়িটি কোনটি? উনি কোন ফ্লাটে থাকতেন?
তিনি গাল গম্ভীর করে বললেন,
অন্য কাউকে একটু জিজ্ঞেস করুন তো দাদা!
দেখছেন তো! কাজ করছি
: দাদা, এইতো গুগলে ছবি আছে,
ঠিক কোন বাড়িটি বলুন না!!
: আরে ছাড়ুন তো দাদা, গুগল ফুগল কখন দেখি!
সম্ভবত এই বাড়িটিই হবে;
দণ্ডায়মান অনুচ্চ প্রাসাদ
ছিমছাম কাঠের দরোজা
রং লাগানো গোলাকার জানালার সিক
নুতন পলেস্তারা আর পেন্টিংএর নীচে
ভ্রুকুঞ্চিত শত বছরের বয়সের বলিরেখা।
জানালার সিক ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এক
কিশোরীকে জিজ্ঞেস করতেই
খ্যাচ করে জানালাটা বন্ধ করে দিলো সে।
দরজায় কড়া নাড়লাম ক'বার, খুললো না।
ভাবলাম, এই কি সেই কোলকাতা?
নজরুল আর ভারতবর্ষ!!
আস্তে আস্তে ফিরে এলাম বটে
রক্ত কনিকায় স্ফুলিঙ্গের মতো প্রবাহমান শরীর
ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে
নির্বাক পাথরের দণ্ডায়মান স্তম্ভ
প্রসারমান বিদ্রোহের আগুন ছুটছে
৩/৪ সি তালতলা লেনের সুরম্য ভবনে।
যে ভবন জন্ম দিয়েছিলো বিদ্রোহী কবিতার
যে অন্ধকার কক্ষ তৈরি করেছিলো
বিদ্রোহী নজরুল আর কমরেড মোজাফ্ফরের।
যে ভবন থেকে উদ্গীরিত বিদ্রোহের কম্পনে
কেঁপে উঠেছিলো সারা ভারত
ব্রিটিশ রাজের তখতে তাউজ-
ওয়েস্ট বেঙ্গল সে ভবনের সামনে দারোয়ান রাখেনি কেনো?
কেনো এখনো হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়নি তাকে?
কেনো এখনো নিবির এ প্রকোষ্ঠের জাদুঘরে
নিষ্প্রদীপ সে দীপ জ্বলছে না, প্রজ্বলনের শিখা হয়ে
চেতনার মহামন্ত্রে, কেনো?? কেনো????
কেনো??????

-মাসুদ আলম বাবুল
২৫ মে ২০১৯, কালিকাপুর, পটুয়াখালী।