পুরুষ হৃদয় এক বুনোহাঁস
আকাশের ওপারের প্রগাঢ় আকাশ
বাতাসের ওপারের আরও বাতাস
তাকে ডেকে নেয়-অন্ধকারে-
ছুঁড়ে দেয় গভীর অমাবস্যার গহবরে।
সেই আঁধারের জলে পুরুষ-হৃদয়
খাবি খায় বারেবারে; আর তড়পায়
ডাঙায় তোলা মাছের মতো,
যেন অপেক্ষা করছে তার-ধারালো দা-বটি যত।

আমি যেন রাজা পুরুরবা
বাঁধা পড়ি তোমার শর্তের জালে; ভূত-ভবা
কিংবা ভূতং ভব্যং ভবিষ্যং বাঁধা পড়ে
তোমার প্রাণের ’পরে-তোমারই দ্বারে।
একদিন ইন্দ্রের সভায় নেচেছিলে
পৌষের ভোরের কুয়াশারা যেন গলে গলে
পড়েছিলো নুপূরের তালে; নদী-চর-ক্ষেতের বাতাস
ঘুঙুর হয়ে বেজেছে পায়ে; তারই সুবাস
টের পেয়ে অপলক তাকিয়ে থেকেছি,
ঘুঙুর-মিঞ্জিনী পায়ে ছন্দের খেলা দেখেছি।
যেন ফাল্গুনের নতুন পাতারা
আধ-বোজা চোখে বিস্ময়ে দেখে তাহারা
তোমার পায়ে-ওহে উর্বশী-তোমার শরীরে
রুপ হয়ে ঝরে-যেন রুপ হয়ে ঝরে।

তুমিও তো দেখেছো আমায়-
সে বিস্ময় আমারে ভাসায়ে নেয়,
বুকেরই গহীন তলে নীরবে
জমা হয় মাদকতা; অনন্ত উৎসবে
মজে যাই; সভাসদ সবে
ঘোরতর বিরক্তি ছড়ায় চোখে মুখে
তোমার আমার দৃষ্টি ছড়ায় শুধুই নিজেদের দিকে।

হে উর্বশী, ভোরের সূর্যের মতো
অভিশাপ এসে নিয়ে যায় মর্তে তোমায়-আহত
পাখি যেন- ডানা ঝাপটিয়ে
পড়ে থাকো মর্তের মাটিতে-পৃথিবীর ভূয়ে-
নতুন জন্ম পাও যে- মানুষীর জন্ম-
ফাল্গুনের মর্ম- প্রাণেরই মর্ম
বুকে নিয়ে - তুলে নিয়ে বুকে-
একবার এসে আবার হারাও কোন দিকে-
একবার পাই আবার হারাই
আবারও একবার পাই- পেয়ে আবার হারাই।
সেই পাওয়া আর না-পাওয়ার
দহনে জ্বলি-আগুনে পুড়ি বারংবার।

আমারই ভুলে তোমার শয্যা পাশের মেষ-পুত্রবৎ-
চুরি হয়ে যায় যেন-হয় অপহৃত-
যেন গন্ধর্ব বিশ্বাসুরের কূটচালে
হারাই তোমায়; অন্ধকার জলে
সাঁতরিয়ে খুঁজি-বিবস্ত্র দৌড়াই- মেষের সন্ধানে
গন্ধর্বের পিছে ছুটি বনে-বনে-
পথে-পথে - ঘোরলাগা চোখে বনে-বনে-
দৌড়ে যাই আর হা-পিত্যেসে মরি,
আমার সে-ভুলে স্বর্গলোকে দাও পাড়ি।
হে উর্বশী-প্রাণেশ্বরী- তোমারে হারায়ে খুঁজি
দিকচক্রবাল জুড়ে-অনর্থক-মিছামিছি।
হৃদয়ের সারৎসার হয়ে যায় মজ্জাহীন
চলে যায় অন্ধকারে-ডুবে যায়-হয় লীন।

একবার আসো
বৎসরান্তে একবার এসে ভাসো-
প্রাণের খেলায়-বাকিটা সময় সারকুঁড়ে
পড়ে থাকি আমি; অন্ধকারের কবরে
শুয়ে শুয়ে যেন অপেক্ষায় রই,
কোন স্বর্গ হতে তুমি আসিবে আবার সই।
আবারও একবার
আরো একবার-হারাবো জেনেও বারবার-
তবুও উর্বশী, তোমারই অপেক্ষায় থাকি,
আসমানের সুদীর্ঘ গায়ে আঁকি
তবু তোমারই মুখচ্ছবি। এই অসহ্য অদেখা কবে
শেষ করে দিয়ে তুমি আবার আসিবে?