এই বুনোপথ ধরে, সকলের অগোচরে, হেঁটে চলি; শুনি কতো গুঞ্জন!
চোখ যায় বহুদূরে – পাহাড়ের বুক ভরে, দেখি বিধাতারি কতো রঞ্জন!
পাখিদের কলতানে, প্রকৃতির ঐকতানে, হয় সব ক্লান্তির ভঞ্জন।
গুনগুন গানে-গানে, চলি পথ আনমনে; ঝর্ণাও বয় করে শিঞ্জন।
ছন্দে-আনন্দে, পুষ্পের গন্ধে, কেঁপে উঠে উচ্ছ্বাসে কায়মন!
প্রাণের স্পন্দে, হিয়া মোর ক্রন্দে – থেকে যেতে বনবাসে আমরণ!
ব্যাকপ্যাক নিয়ে পিঠে – কভু চলি অহোনিশে, পেরিয়ে কতো চড়াই-উতরাই;
হাঁকপাঁক করে হেঁটে, জিরাই খেতে বসে; নদী পেলে, কভু নামি সাঁতরাই।
তাঁবুখানা টানিয়ে, সটান শুয়ে পড়ে, হই কভু নাক-ডেকে ঘুমন্ত।
একটানা পথ-পাশে, সারাদিন ধ্যানে বসে, যাই কভু বনে সাধু-সন্ত!
কভু থামি জনপদে – খাই বসে রেস্তোরাঁতে; কাটাই ক্যাম্পে শুয়ে রাত্রি;
কমদামি বিপণিতে, দরকারি কিনে-কেটে, আবারো ট্রেইলে অভিযাত্রী।
রাতে, রুপালি জ্যোৎস্না মায়ায় স্নিগ্ধ করে চারিপাশ।
প্রাতে, রবি-লালিমা রাঙায় রক্ত-রঙে পুবাকাশ।
অহ্নে, অরণ্যে, অপরূপা কাননে, কভু চোখে যায় পড়ি সুনয়ন।
সায়াহ্নে, বিদায়-ক্ষণে, মনোলোভা রাঙা-রঙে, আবারো রাঙায় রবি দুনয়ন।
মাঝরাতে উঠে দেখি – সারঙ্গের, জ্বলে আঁখি; জ্বলে লক্ষ তারার ভীড়ে শশাঙ্ক।
ভোর হতে পথে চলি; ভৃঙ্গও চলে, সাথী; চকিতে চমকে – ওমা! এ-যে শশঙ্ক!
খসখস শব্দে এদিক-ওদিক ছুটে, অ্যাকর্ন কুড়ায় কাঠবিড়ালি।
মূষিক জব্দে, দিগ্বিদিক ছুটে, তাড়িয়ে বেড়ায় বনবিড়ালি।
গ্রীষ্মের কিরণে, ছায়া-সুনিবিড় বনে, শীতল ঝর্ণা-জলে মস্তি!
বর্ষার বর্ষণে, বর্ষাতি পরনে, অটল-বৃক্ষ-তলে স্বস্তি।
শরতের নীলাকাশে, তুলো-মেঘ চলে ভেসে; তারার মেলায় জাগে ভক্তি!
হেমন্তের হিম বাতাসে, জুড়োয় প্রাণ পরশে; শান্তির ঘুমে বাড়ে শক্তি।
শীতের আগমনে, ঝরাপাতার পতনে – ঘুমানোর ব্যাগে আনুরক্তি!
বসন্তের জাগরণে – কোকিলের কুহুগানে, ফুলের সুবাসে, মেলে পঙক্তি।
নেই শ্বাপদ-শার্দূল, নয় বিপদসংকুল – স্বপ্নেরি গিরিপথে একখান!
আবহাওয়া অনুকূল; হয় চিত্ত আকুল – দুলি উঠে ভাবাবেগে মনপ্রাণ!
কভু বসে তোরি ক্রোড়ে, নিভৃতে ধ্যান করে, গুহায় থাকি পড়ে নিঃসঙ্গ;
আঁখি মেলে দেখি দূরে – শুভ্র অভ্র সাদরে, চুমে যায় তোরি উঁচু শৃঙ্গ।
হেরি তোরি পাদদেশে – মজি ধরণীরি রূপে-রসে; তোরি আশ্রয়ে গড়ে কতো লোকালয়;
কোথাও ঐ বারীশে, মিশে তোরি একপাশে; ঊর্মি নম করে তোরি পায়।
ছাড়িতে চাহি না তোরে; হৃদয় ব্যাকুল করে – দুনয়নে হেরি তোরি আভরণ!
খাবো এটা-ওটা ধরে, কভু তোরি ফল পেড়ে – রয়ে যাই তোরি ক্রোড়ে আমরণ!