বারান্দার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখি,
বাতাস কীভাবে নিজের শিরা ছিঁড়ে ফেলে
গাছের পাতায় রেখে যায় এক চিরন্তন স্পন্দন।
আমি জানি, রাতগুলো ঝরে পড়া নক্ষত্রের মতো
মনে রাখে না নিজের গল্প।
তোমার ঘুমহীনতার আঁচলেও তো
থাকে কিছু অজানা রঙের দাগ।
টেবিলের ওপরে রাখা সেই পুরোনো কলম,
কালি শুকিয়ে গেছে,
তবু আমি লিখতে শুরু করি।
শব্দরা ভেঙে পড়ে,
এক-একটা বর্ণ যেন
আমার ভেতরের কোনো পুরাতন ক্ষত।
কবিতার শিরোনাম খুঁজতে গিয়ে
বারবার ভুল করে তোমার নাম লিখে ফেলি।
কিছু নাম, কিছু সম্পর্ক, কখনও আর মোছে না।
রাতের ঠিক দুইটা চৌত্রিশে বিছানার এক কোণে বসে
একটা বাঘ আমার স্বপ্ন খেয়ে নেয়।
আমি চেঁচাই না,
কেননা চেঁচিয়ে ওঠা মানেই
ঘুমের গভীরতা থেকে ছিটকে পড়া।
আমার বুকের বাঁ পাশে একটা কাঁটা,
সেখানে মধুর মতো জমে থাকে
তোমার ফেলে যাওয়া গান।
তোমার হাত কখনও কি ভেবেছে
আমার আঙুলের মাঝখানে ঘুমাবে?
আমি হাত বাড়াই, আঙুলগুলো মোম হয়ে যায়,
গলে গলে পড়ে—
তবু তাতে তোমার ছায়া।
একটা পেঁচা আমার জানালায় ঘুরে ফিরে যায়,
তার ডানায় আটকে আছে
বেহালার সুরের মতো ভাঙা কিছু রাত।
এমন রাতগুলোয়—
আমার পরনে কেবল এক টুকরো স্বপ্ন,
বাকি শরীর নগ্ন চিন্তার নকশায় ঢাকা।
জোনাকিরা এসে বসে বুকের নিচু ঢালে,
তারা আলো আর অন্ধকারের খেলায়
আমার দুঃখকে ঠোঁট ছোঁয়ায়।
যে আকাশের চাঁদ নেই,
সেখানে প্রতিটি তারা এক-একটি ব্যর্থ কবিতা।
তোমাকে ডাকি না,
তুমি জানো না,
আমার ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে বেরোয়
অসংখ্য ভাঙা শব্দ।
তুমি আসবে না,
তুমি কখনও আসবে না।
তবু রাতের শেষ প্রহরে,
আমি প্রতিবারই খুঁজে ফিরি
হারিয়ে যাওয়া সেই ডানাগুলো।