আমি কার সন্তান?
আরবের মরুর ঝড় আমায় ডাকে,
মিশরের পিরামিডের ছায়া আমায় প্রশ্ন করে,
ব্যাবিলনের ধ্বংসস্তুপের মধ্যে
আমি খুঁজি পূর্বজদের চিহ্ন।
কিন্তু আমার অস্তিত্ব কি ওদের সাথে গাঁথা?
নাকি আমি কেবলই ভুল পরিচয়ের এক দুর্ভ্রান্ত যাত্রী?

আমি নীল নদের ধারে দাঁড়িয়ে
আঁকি নিজের মুখ,
আনুবিসের চোখে আমার প্রতিচ্ছবি ভাসে,
ইসিসের চোখের জল আমার গাল ভিজিয়ে দেয়,
ফেরাউন আমায় চেনে না,
আমি তার উত্তরাধিকার নই।

আমি সিনাই পাহাড়ে উঠি,
মুসার লাঠি মাটি স্পর্শ করে,
কিন্তু লাল সমুদ্রের ঢেউয়ে
আমার আত্মপরিচয়ের রেখা হারিয়ে যায়।
জেরুজালেমের প্রাচীর আমায় চেনে না,
ক্রুসেডের তলোয়ার আমার জন্য তৈরি হয়নি।

আমি কি বেদুইনদের সাথে মরু পেরোনো এক বাঙালি?
নাকি ব্যাবিলনের মাটির ফলকের ভুল লেখা শ্লোক?
আমি কি রোমের কলসিয়ামের রক্তাক্ত বালিতে হারিয়ে যাওয়া
এক বিস্মৃত নাম?
নাকি আমি সাহারা মরুর উটের করুণ দৃষ্টি?

আমি গ্রীক দেবতাদের বাগানে প্রবেশ করি,
জিউস আমায় দেখে প্রশ্ন করে—
"তুমি কে?"
আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না।
অ্যাপোলোর বীণায় আমার জন্য কোনো সুর নেই,
ডেলফির পুরোহিত আমায় অচেনা মনে করে।

তবু, যখন আমি পদ্মার পাড়ে ফিরে আসি,
আমার নোঙর এখানে গেঁথে যায়।
আমি দেখি—
আকাশে বৃষ্টি নেমেছে,
ধানের শীষে জলের দোলা,
মায়ের হাতে ভাতের গন্ধ।
আমি বুঝতে পারি—

আমার পরিচয় পিরামিডের গায়ে লেখা নেই,
আমার নাম কোনো বাইবেলের অধ্যায়ে খোদাই করা হয়নি,
আমি আরব্য রজনীর কোনো চরিত্র নই,
আমি সিন্ধুর পালতোলা জাহাজের নাবিক নই।
আমি সেই মাটির সন্তান,
যেখানে বৃষ্টির শব্দ লিপির মতো বাজে,
যেখানে শিশুরা প্রথম ডাক দেয় বাংলায়,
যেখানে চিরকালের আত্মপরিচয় লেখা থাকে—
নদীর বুকে, মানুষের মুখে, ভালোবাসার গভীরে।