রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে এক উল্গেখযোগ্য ব্যক্তিতব।
তাঁর শেষ পর্যায়ের কাব্য গুলোর মধযে'সেঁজুতি'উল্লেখ
যোগ্য।এটির প্রকাশকাল বাংলা ১৩৪৫ সাল।এই কাব্যে
জীবনের পথ প্রান্তে এসে কবি পার্থিবের মধ্যে অনুভূত অপার্থিব রস সম্পদের অশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন।কবি এখানে জীবনের শেষ পর্যায়ের নানা ঘটনা অর্থাৎ মৃত্যু
কে তিনি নতুনভাবে জয় করেছেন।কবি,প্রথম মৃত্যুকে
ভয় পেয়েছেন,কিন্তু শেষ পর্যায়ের মৃত্যুকে সাদরে আম
ন্ত্রন জানিয়েছেন।কারণ তিনি জানতেন মৃত্যু সকলের জন্য বাধ্যতামুলক,একে ভয় পেলে জীবনে সফলতা
সম্ভব নয়।'সেজুতি'অর্থ সন্ধ্যা দীপ।এই শব্দের নামকর
ণের দিকে লক্ষ্য করলে কবির আসল স্বরূপটি নির্ণয় করা সহজ।কবি জীবনের সন্ধ্যায় সাঁঝের বাতি জ্বালিয়ে
সারাদিনের নানা কর্ম ,কোলাহলময় জীবনের লাভ-
লোকসানের একটি হিসাব করেছেন।কবির দৃষ্টি আজ সুদূর প্রসারিত,আলো আঁধারের ফাঁকে ফাঁকে অজানা
তীরের বাসা দেখতে পেয়েছেন। শিরায় শিরায় তাঁর দূর
নীলিমার ভাষা ঝিমি ঝিমি করছে।এই চির-চঞ্চল ও
ধ্বংসশীল জগত ও জীবনকে ছাড়তেই হবে।,তবু কবি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন যে সামান্য জীবনে অনেক দূর এগিয়ে যায় সকল ধ্যান-ধারনা এবং এখানে জীবনের সার্থকতা। কবির ব্যক্তিগত জীবন
পর্যালোচনার পটভূমিকায় এই সত্য উপলব্ধি 'সেজুতি' কাব্যের মর্ম কথা। এই কাব্যে জন্মদিন,পত্রোত্তর,যাবারমুখে,অমৃত্যু,পলায়নী,স্মরণ,
প্রতীক্ষা,পরিচয় প্রভৃতি কবিতায় কবি নিজ জীবন এবং তাঁর ভাব চিন্তার পরিচয় দিয়েছেন।সেজুতি' কাব্যের 'জন্মদিন'কবিতায় কবির বক্তব্য ধরণী ও জীবন মানুষের চির পথিকবেশী অন্তরতম স্বত্বাকে আবদ্ধ রাখতে পারেনা।ধরণীর শত শত বন্ধন ও জীবনের আশক্তির ডালি ও অপবিত্র সঞ্চয় ভগ্ন মৃৎ
পাত্রের মতো ছুড়ে ফেলে দেয়।জন্মদিন,কবিতায় তিনি অনিত্যের উপর নিত্যের সন্ধান পেয়েছেন-
কবি বলছেন 'জন্মোৎসবে এই যে আসন পাতা
হেথা আমি যাত্রী শুধু,অপেক্ষা করিব,সব টিকা
মৃত্যুর দক্ষিণ হস্ত হতে নূতন অরুণলিখা
যবে দিবে যাত্রার ইঙ্গিত।'