বাংলা কাব্যে বিশেষ করে আধুনিক বাংলা সাহিত্যে জীবনানন্দ দাশ একক আভিজাত্যে এক ভিন্ন পথ সৃষ্টি
করে স্বতন্ত্র মহিমায় উদ্ভাসিত কবি পুরুষ। তাঁর কবিতা এক নতুন পথের সন্ধান দিয়েছে।নানা বৈশিষ্ট্যে তাঁর কবিতা বিশেষভাবে চিহ্নিত। আত্মলীন এই কবি নিজ সৃষ্টিকে দেশজ ঐশ্বরযে যেম মন্ডিত করেছেন তেমনি
আন্তর্জাতিক চেতনাকেও উন্মুখ করেছেন। কবি ভাল করে ইংরেজি কবিতা পড়েছিলেন। এর প্রভাব যেমন তাঁর কাব্যে আছে তেমনি আচে ফারসি ভাবধারার অনু
সরণ। কবির কাব্য পাঠ করে যে বৈশিশট্যগুলো চোখে
পড়ে তা হলোঃ-১)তিনি বাস্তবতার কবি। বাস্তবতাকে অতিক্রম করে তিনি পরাবাস্তবতার আবহ তাঁর কাব্যে
সৃষ্টি করেছেন। ২) তিনি রোমান্টিক ভাবধারা অনুসরণ
করেননি। ৩) ইতিহাস ভূগোল চেতনা তাঁর প্রখর ছিল।
৪)কাব্যে তিনি প্রতিষ্ঠিত রীতি অতিক্রম করে দেশজ
শব্দ ব্যবহারে স্বচ্ছন্দ অনুভব করেছেন।৫)তাঁর কবিতার
ঐতিহ্য এসেছে দেশ কাল পাত্র ছাপিয়ে এক বিশেষ
পরিবেশে।৬)শিল্প প্রকরণে তিনি অক্ষরবৃত্তের দীর্ঘ পয়ার নির্মাণ করে ভাবকে প্রসারিত করেছেন।
৭) ক্লান্তি ও মৃত্যু চেতনা তাঁর কাব্যের অন্যতম মূল
সুর। ৮)তিনি যুগের বীভৎস চেহারা দেখে পীরিত হয়েছেন এবং অতীত ঐতিহ্যের আবাহনে সোন্দরযের
অনুসন্ধান করেছেন।এই সব বৈশিষ্ট্য ছাড়া তাঁর কাব্য
ছন্দ,ভাব,প্রকাশে এক নবতর চেতনা ও ভঙ্গি নিয়ে যুগের ক্ষত-বিক্ষত রুপকে প্রকটিত করে তুলেছে।
জীবনানন্দের কাব্যে ঐতিহ্য এসেছে দেশ কালের গন্ডি অতিক্রম করে। কবির কল্পনা স্বকালে সীমাবদ্ধ
ছিল না। তিনি হাজার বছর ধরে পথ হেঁটেছেন।
তাঁর এই চলা শান্তির উদ্যেশ্যে। এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কবির চেতনার শান্তির ছায়া কোথাও অনুভবে দীপ্তহয়ে ধরা পড়েনি।তাঁর ইতিহাস এসেছে
কবি প্রসিদ্ধির মোহে নয়,বাস্তব জীবনানুভূতির গভীর
বোধের আশ্রয়ে। তিনি অতীতকে মূল্যায়ন করেছেন
ইতিহাসের আলোকে। তাই শ্রাবন্তী,বিদিশা,ব্যাবিলন,
আফ্রিকা তাঁর কাব্যে আসন করে নিয়েছে। জীবনানন্দ দাশের ঐতিহ্য চেতনা স্বদেশ ও বিদেশ
জুড়ে বিস্তৃত। প্রাচীনকাল ও সেকালের দীপ্ত অনুভব তাঁর কাব্যকে চমৎকার প্রীতি স্নিগ্ধতা দিয়েছে।