কবি আখলাক হুসাইন। একজন তরুণ প্রজন্মের লেখক গবেষক ও কবি। তিনি ১৯৮৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সোমবার প্রভাতে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নস্থ গোসাইনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুহাম্মদ তেরা মিয়া ও মাতার নাম মুহতরমা বদরুন নেছা।
তিনি নিজ গ্রাম গোসাইনপুরে তাঁর শৈশব জীবন অতিবাহিত করেন। পাহাড়ের সবুজ সমারোহ ও গাছে গাছে পাখিদের কোলাহলের সাথে খেলা করে বেশ আনন্দেই কাটে তাঁর শৈশবকাল।
কবি আখলাক হুসাইন ১৯৯৬ সালে নিজ গ্রামের "গোসাইনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে" ভর্তি হয়ে ২০০১ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠকালে তিনি মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েন। পিতার সাথে তার আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি তাঁর শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করেন। মাস্টার মঈন উদ্দিন সাহেবের পরামর্শক্রমে তিনি ২০০২ সালে মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সিলেট জেলার বিমানবন্দর থানাধীন জামেয়া ইসলামিয়া আবু হুরায়রা রাঃ মহালদিক মাদ্রাসা থেকে তিনি পুনঃপ্রাথমিক ও নিন্মমাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন করেন।
এরপর তিনি নিজ ইউনিয়নের জামেয়া ইসলামিয়া এশায়াতুল উলুম ফতেহপুর মাদ্রাসা থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা, সিলেট শহরের পার্শ্ববর্তী মার্কাযুল উলুম মুহাম্মাদপুর (মেজরটিলা) মাদ্রাসা থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা, সিলেটের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শায়খুল আরব ওয়াল আজম সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানি রহ.'র স্মৃতি বিজড়িত দারুল হাদিস আল মাদানিয়া খেলাফত বিল্ডিং থেকে ফযিলত (স্নাতক) এবং ২০১২ সালে জামেয়া ইসলামিয়া নূরীয়া ভার্থখলা মাদ্রাসা থেকে তাকমিল ফিল হাদিস (এম. এ) সম্পন্ন করেন।
কবি আখলাক হুসাইন ২০০৭ সালের রমজান মাসে কোরআন শিক্ষা প্রশিক্ষণ বোর্ড বাংলাদেশ এর তত্ত্বাবধানে কেরাতের সনদ অর্জন করেন। এরপর ধারাবাহিক ভাবে প্রত্যেক রমজান মাসে তিনি কোরআনের খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
২০০৮ সালে জামেয়া ইসলামিয়া এশায়াতুল উলুম ফতেহপুর মাদ্রাসায় পাঠকালীন সময়ে ত্রিমুখী শিক্ষার সনদ অর্জনের লক্ষে তিনি আঙ্গারজুর আলিম মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। সেই সুবাদে এই মাদ্রাসা থেকে ২০১০ সালে দাখিল ও ২০১২ সালে আলিম সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে সিলেট মদন মোহন কলেজে ব্যাচেলর অফ সোস্যাল সায়েন্স (বিএসএস) অনার্স (রাস্ট্রবিজ্ঞান)এ ভর্তি হয়ে ২০১৬ সালে কৃতিত্বের সাথে বিএসএস সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার অধিনে ফুলবাড়ি আজিরিয়া ফাযিল ( ডিগ্রি) মাদ্রাসা থেকে ২০১৬ সালে ফাজিল সম্পন্ন করেন এবং ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা থেকে কামিল (এমএ হাদিস) সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশের তিন ধারা শিক্ষা ব্যবস্থার পত্যেক ধারায় শিক্ষিত।
২০১২ সালে তাকমিল ফিল হাদিসের সনদ অর্জনের পর কবি আখলাক হুসাইন অন্যান্য ধারায় শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি কর্মজীবন শুরু করেন। সর্বপ্রথম তিনি ২০১২ সালের শেষার্ধ থেকে ঘিলাছড়া শাহ সৈয়দ আলি রহ. ফেঞ্চুগঞ্জ মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে কর্মজীবনের সূচনা করেন। তথায় এক বছর শিক্ষকতার পর ২০১৩ সালের শেষার্ধে তিনি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার রাজাগঞ্জ ইউনিয়নের জামেয়া ইসলামিয়া ইমদাদুল উলুম দারুল হাদিস লালারচক মাদ্রাসায় গমন করে দীর্ঘ চার বছর সেখানে শিক্ষকতার গুরু দায়িত্ব আঞ্জাম দেন। এছাড়া তিনি সেখানে শিক্ষাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি ছোট মির্জারগড় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালের শেষার্ধ থেকে অদ্যাবধি তিনি সিলেটের সর্বপ্রাচীন হাদিসের প্রতিষ্ঠান সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানি রহ.'র স্মৃতিবিজড়িত দারুল হাদিস আল মাদানিয়া খেলাফত বিল্ডিং মাদ্রাসায় ইলমে হাদিসের দরস দিয়ে যাচ্ছেন।
কবি আখলাক হুসাইন একাধারে একজন হাদিস বিশারদ, তাফসিরকার, লেখক, গবেষক, সাহিত্যিক, কবি ও ছড়াকার। ২০০৫ সালে পুনপ্রাথমিক শিক্ষা অর্জন কালে ৫ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তিনি ছড়া-কবিতা রচনার মধ্যদিয়ে সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন। এছাড়া তিনি সমাজকর্মী হিসাবে গোয়াইনঘাটের আনাচে-কানাচে প্রসিদ্ধ। তার সাহিত্যকর্ম গুলো বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় স্থান করে নিলেও এখন পর্যন্ত এগুলো রয়েছে পান্ডুলিপি আকারে। সদ্য প্রকাশিত গোয়াইনঘাটের বিগত দুই শত বছরের সেরা ৫৫ জন আলেমের জীবনী নিয়ে লেখা তার গবেষণা গ্রন্থ "আকাবিরে গোয়াইনঘাট" পাঠক মহলে বেশ সাড়া জাগিয়েছে।
এছাড়া তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে এলাকার হতদরিদ্র মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছেন। তিনি বর্তমানে সিলেট বিভাগের আলোচিত সামাজিক সংগঠন সিলেট ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
পারিবারিক জীবনে কবি আখলাক হুসাইন ৩০অক্টোবর-২০২০ঈসায়ী শুক্রবার নিজ ইউনিয়নের ফতেপুর ১ম খন্ড নয়াগ্রামের জনাব মোঃ ফয়েজ উদ্দিন সাহেবের ৩য় কন্যা (আমি) মারজানা হুসাইন এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। আল্লাহ আমাদের পথচলা সহজ করুন। আমীন!