আমার বিদায়ের দিনে
সময় পেলে একবার এসো,
শেষবারের মতো,
যদি মন চায় দেখতে আমায়।
খবর দেওয়ার মতো কেউ নেই,
তবে খবর নিয়ে নিও।
কীভাবে জানবে যে—
তোমার বাতাসখানি রে
দূষিত করবার সেই অভিশপ্ত যন্ত্রটি
চিরতরে আজ বিকল হয়ে পড়েছে!
জানানোর মতো কেউ নেই,
তাই আমিই বলে দিয়ে যাচ্ছি—
যেদিন ভোরে চোখ মেলে দেখবে,
বাতায়ন পানে
গাছের সবুজ-সজীব পাতাগুলো নুইয়ে পড়েছে,
ডালে বসে থাকা পাখির কণ্ঠেও বিষাদের সুর।
যেদিন তোমার শূন্য বিছানা—
শূন্যতার অবসান-আগমনী প্রহরে
বারংবার মূর্ছা যাবে,
সেদিন জেনো,
এই অভিশপ্ত পথের পথিক—
আজ চিরবিদায়ের সাজে সেজেছে বুঝি!
যদি পারো, তবে বেলা থাকতেই বেরিয়ে পড়ো,
পৌঁছে মোর দ্বারে।
যদি দেখো—
কোনো কান্নার রোল পড়েনি,
কোনো লোকে ভিড় করেনি,
তবে ঘাবড়ে যেও না যেন।
জেনো, এই খুশির দিনে
লোকে কাঁদতেই বা যাবে কোন দুঃখে!
আর লোকজনের আগমনই-বা হতে যাবে
কোন অকারণ কারণে!
তুমিও কি থাকবে তাদেরই মতো দূরে?
একটিবারও কি দেখবে না ফিরে?
নাকি আমাকেও ভুলে যাবে—
সহস্র দিনের তলে চাপা পড়া
একটা পুরোনো, অপ্রয়োজনীয় দিনের মতো!
খাটিয়া খানিরে বহন করবার মতো
যদি কোনো লোক না জুটে,
তবে যদি পারো, তবে—
পাঁজরের দাবি বৃথা,
একটু কাঁধে তুলে নিও,
মোর পাপে পঙ্কিল দেহটারে!
সেদিন শেষবারের মতো, অবহেলা ভরে,
আপন হাতে ফেলে দিও কবরে।
তবে খেয়াল রেখো—
মূল্যহীন গোরে অমূল্য অশ্রু যেন না ঝরে!
পৃথিবীর মাটি যদি মোরে
আঁকড়ে না ধরে,
তবে তুমি নিজ হাতে করে
ছুড়ে দিও শূন্য মাঝারে।
আকাশের শূন্যতা হয়তো ঠিকই নেবে—
শূন্য আমায় বরণ করে!
তুমি তখন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ফিরো
স্বস্তির গন্তব্যে।
তবে যদি সত্যিই কিছু থাকে বলার,
অব্যক্ত রেখো না—
ব্যক্ত করে দিও ওই সুনীল শূন্যতার মাঝে,
তোমার কণ্ঠে যে কথাটুকু শুনতে
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রতীক্ষায় ছিলাম,
তা মিশে যাবে ধুলো হয়ে অনন্ত শূন্যতায়,
দোলা দেবে গিয়ে মোর বিকল কর্ণে!