বাপ-মায়ে যতন করে রেখেছিল নাম—
ইয়াসিন রহমান।
তবে নামটি তার লাগে না তেমন কাজে,
অবলা নাম দুটো পড়ে থাকে বই-পত্রের ভাঁজে।
এ নামে ওকে চিনবে না কেউ ভালো,
বুঝবে না কেউ বিন্দুমাত্র ছালও!

মা কখনো শুধায় না ওকে বলে "সোনা-মনি,"
এর বদলে বকেন তিনি, ওকে সারাক্ষণই!
কেউবা ওকে "মাতাল" ডাকে,
কেউবা কিছুটা বাসে ভালো,
এসব শুনেই এক রকমে,
জীবনটা ওর চলে গেল!

আমরা ওকে "তবাকু" ডাকি,
মোরা একসাথে যবে থাকি।
তবে বাগে পেলে বাকি রাখি না, বলতে ওরে—
"মাতাল-কানাই পথে পথে ঘোরে!"
ঘরে-বাইরে সর্বত্রই এখন,
সকাল-বিকেল, নিতুই সারাক্ষণ!
এসব ডাক ও শোনে,
তবে জানি—এতে কিছু না করে ও মনে!

আমরাও এতে পেয়ে বসি আরো, যা খুশি যা-তা বলি!
বন্ধু মোদের প্রাণের ধন, চলি করে গলাগলি।

এত গেল নামের পালা,
এবারে চলো শুরু করি খেলা!

নিত্য ভোরে, ঘুমের ঘোরে, স্বপন দেখে জাগে—
আজকে গিয়ে পৌঁছবে ভাই, কলেজে কে কার আগে!
তবে কার কথা কে শোনে,
মন কি কভু সে ব্রত মানে?
মিনিট দশেক যাক না হেলায়,
নেপটে পড়ে ঘুমের ভেলায়।
অবশেষে যখন ওর ভাঙে ঘুম,
চোখে-মুখে দেখে ধুম!
কারণ, তখন বেলা তিনটা—
বাজে কলেজ ছুটির ঘণ্টা!

মাঝেমধ্যে কিছুটা আছে নেশা-পানির অভ্যেস,
এর পেছনে করেছে ও যে অনেক টাকা নিঃশেষ!
বর্তমানে অর্থায়নে পড়েছে কিছুটা ভাটা,
এই প্রভাবে এক প্রকারে বন্ধ ও পথে হাঁটা।
কত বাঁধা, কত দ্বিধা, কত শঙ্কা মনে,
তবু মন কি আর সে ব্রত মানে!

অবশেষে এসে, কিছুটা যদি মন ভুলানো যায়—
এই ভরসায়!
বন্ধু তবাকু
ধরলো একটা মেয়ের পিছু!
এরপর হলো শুরু আরেক অধ্যায়,
কত ইতিহাস লেখা হলো ইতির পাতায়...

এর পরে আনমনে,
ইয়াসিন একদা আপন মনে,
সব সঙ্গ করে ভঙ্গ, শুধু গড়বে নতুন অধ্যায়!
ভাবলো বসে, আচ্ছা কষে, বাঁধলো নতুন প্রত্যয়!

যদিও চলে সবার মাঝে, জগৎজুড়ে,
তবুও যেন ও এক ভিন গ্রহের প্রাণী!
বোঝা দায়—কোথা ধায়, কোথায় নিকট-দূরে,
হুঙ্কার তোলে, গর্জন ছাড়ে, সাদা-জাগ্রত ওর পাণি!

মানবতাবাদী বন্ধু মোদের, সদা সবার পাশে,
পশুপাখিরও যত্নে নিপুণ, নিতুই ভালোবেসে!

কখনো ভাবে করবে ব্যবসা, কখনো ভাবে চাকুরি,
হেলাচ্ছলে কখনো বলে, সব ছেড়ে, এই বুঝি ভাই বিদেশ ধরি!

এইতো ওর গুণ!
অবশেষে বাড়ির পাশে ফলিয়েছে এক বেগুন!
এতেই বুঝি সবাই খুশি, পাড়ার লোকে শুনে—
হাসলো সবাই প্রাণটা মেলে!
বললো কতক, "সাবাস ছেলে!"
পাল্টাবে ওর গুণ যে এবার, এই বেগুনের গুণে!

শুধু কি তাই? ওর আরও গুণ আছে!
গুনে গুণে গুণান্বিত হয়ে দিন কেটে গেছে—
পোশাক বদলায় শোবিজরা যেমন,
ইয়াসিনও তেমনি করে কলেজ পরিবর্তন

ঠিক করে বলা দায়—
কবে ও কোন কলেজে যায়!
কোন পথে, কার সাথে, কোথা কী বেড়ায়!
সপ্তাহে যদি পাঁচ দিন তবে মাসে বাইশ হয়,
বাইশ দিনে কম করে কুড়ি খান কলেজে ওর—
উপস্থিতি পাওয়া যায়!
তবুও সবে স্বস্তিতে বেশ, অন্তত কলেজে তো যায়!

মধ্যমাঝে অবশ্য হঠাৎ করে সে গুড়েও পড়ে বালি,
সবার ভাবনায় দিয়ে কালি—
চুপচাপ নিরালায় ঘরের কোণে,
দিন ওর কেটে যায় কোনরকমে!

মায়ের বকা, বোনের ঝকা, বন্ধু মহলে অবজ্ঞা—
এসবের ভিড়ে সবকিছু ছেড়ে করল ও আরো দৃঢ় প্রতিজ্ঞা!
"এবারে ঠিক পড়বে বই আচ্ছা করে,
কলেজেও ঠিক যাবে নিত্য ভোরে!"

খাওয়া, ঘুম মাটি করে তিন দিন ধরে,
তিনখানা বই বগলে করে, লাইব্রেরী ঘোরে!
এর দুদিন পরে—
বই রইলো বইয়ের মতন পড়ে,
তবাকু বেড়ায় নিজের মতন ঘুরে!
এতসব আয়োজন, ভরলো দেখে মোদের মন।
নিয়তির পরিহাসে বন্ধু এবারে এসে, বলে— "শোন,
করেছি আমি এক নতুন আয়োজন!"

মোরা উৎফুল্ল মনে চেয়ে বন্ধুর পানে,
বললাম, "বলিস কী?"
এক গাল হাসি হেসে, কিছুটা কাশি কেশে,
ও বলল মোদের, "আরে, ঠিকই বলেছি!"
আমরা বললাম, "আগে তো বল, কী তোর পরিকল্পনা?"
ও বলল, "আর বলিস না, সবই যন্ত্রণা!"

"জীবনভর উপোস করে ছাইপাশ মাটি করে,
কতই তো ফলিয়েছি কত বাহারি সব কল্পনা!
তবে এবারে যা ফলিয়েছি তা নয় নিছক জল্পনা!"

হাসবি তোরা, আসবে সবাই— খেতে মোর দোকানে!
কাউকে দেবো না বাকি, সবাই খাবে কিনে!

এখনো শঙ্কায়—
কখন কী যে হয়,
অদূরে হবে কিনা তা বাস্তবায়ন!
তবু ডেকে বলে মন,
"একদিন ঠিকই আসবে নতুন ধারা!"
বন্ধু বলে, "হইছে আমার আকাশ ভরা তারা!"