মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলা ভাষার বর্তমান সময়ের অন্যতম প্রধান কবি শহীদ কাদরী চলে গেছেন আমাদের ছেড়ে। উচ্চ রক্তচাপ এবং তাপমাত্রাজনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ্য ৭৪ বছর বয়সী এ কবি নিউইয়র্কের নর্থ শোর ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কবির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং আইসিইউতে থাকা কবি সকলকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে যান।
বাংলা কবিতার অন্যতম জীবন্ত কিংবদন্তী কবি শহীদ কাদরী ১৯৪২ সালে কলকাতার পার্কসার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। ১০ বছর বয়সে চলে আসেন ঢাকায়। ১৯৫৩ সনে মাত্র ১১ বছর বয়সে ‘পরিক্রমা’ শিরোনামে তিনি একটি কবিতা লিখেন। যেটি ছাঁপা হয় মহিউদ্দীন আহম্মেদ সম্পাদিত ’স্পন্দন’ পত্রিকায়। এরপর লিখেন ‘জলকন্যার জন্য’। সেটিও ছাঁপা হয় ‘স্পন্দনে’। ১৪ বছর বয়সে লিখেন ‘এই শীতে’ যা বুদ্ধদেব বসুর ‘কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
১৯৭১ সালে শহীদ কাদরী বিয়ে করেন পিয়ারীকে। তাঁর সঙ্গে ১৯৭৮ সনে পাড়ি জমান জার্মানীতে। পিয়ারীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তিনি চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে নতুন সঙ্গী হিসাবে বেছে নেন তাঁর ভক্ত নীরাকে। তাঁর একমাত্র সন্তান আদনান কাদরী।
আধুনিক নাগরিক জীবনের প্রাত্যহিক যন্ত্রণা ও ক্লান্তির অভিজ্ঞতাকে কবিতায় রূপ দিয়েছেন তিনি। ভাষা, ভঙ্গি ও বক্তব্যের তীক্ষ্ন শানিত রূপ তাঁর কবিতাকে বৈশিষ্ট দান করেছে। শহর ও সভ্যতার বিকারকে শহীদ কাদরী ব্যবহার করেছেন তাঁর কাব্যে। “উত্তরাধিকার”, “তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা”, “কোথাও কোন ক্রন্দন নেই”, “আমার চুম্বনগুলো পৌঁছে দাও” - মাত্র চারটি কাব্যগ্রন্থে অধিকার করে নিয়েছেন আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম আসন।
কবি শহীদ কাদরী বাংলা সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১৯৭৩ সনে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার এবং ২০১১ সনে একুশে পদক লাভ করেন। এছাড়া মাযহারুল ইসলাম কবিতা পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন খ্যাতিমান এ কবি।
কবি শহীদ কাদরী আজ আমাদের মাঝে নেই। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর সৃষ্টিতে, তাঁর কবিতায়। কবির প্রতি রইলো সশ্রদ্ধ অভিভাদন।