তিনি ফররুখ আহমদ। বাংলা-কাব্য-সমুদ্রের তুফান বিজয়ী সিন্দাবাদ। দরিয়া, সমুদ্র, পাখি, মরুভূমি প্রভৃতি বহুল পরিচিত প্রতীক যা অত্যাধিক ব্যবহারে অধুনা বাংলা-কাব্যে প্রায় পরিত্যাজ্য, বাংলা শব্দের ধ্বনির সঙ্গে আরবী-ফার্সি শব্দের ধ্বনি সাযুজ্যে ফররুখে তা নতুন ব্যঞ্জনায় বিধৃত হয়েছে। রবীন্দ্র-নজরুল প্রভাবিত সাহিত্যলোকে তাঁর মঞ্চায়ন অনেকটা ধূমকেতুর মতো, নিঃশঙ্ক। তিনি বিপ্লবী। কেবল তাঁর মতাদর্শের প্রচন্ডতার জন্য নয়, এই বিপ্লব তাঁর উপস্থাপনার অভিনবত্বের, আবহ সৃষ্টিতে তাৎক্ষণিক দক্ষতার।
কত যে আঁধার পর্দা পারায়ে ভোর হল জানি না তা
নারঙ্গী বনে কাঁপছে সবুজ পাতা।
দুয়ারে তোমার সাত সাগরের জোয়ার এনেছে ফেনা
তবু জাগলেনা? তবু তুমি জাগলেনা?
---------------
সমুদ্র থেকে সমুদ্রে ঘুরে দরিয়ার সাদা তাজী
খুরের হলকা – ধারালো দাঁড়ের আঘাতে ফুলকি জ্বলে,
সমুদ্র থেকে সমুদ্রে ঘুরে দরিয়ার সাদা তাজী---
----------------
কেটেছে রঙিন মখমল দিন, নতুন সফর আজ
শুনছি আবার নোনা দরিয়ার ডাক,
ভাসে জোরওয়ার মউজের শিরে সফেদ চাঁদির তাজ
পাহাড়-বুলন্দ ঢেউ বয়ে আনে নোনা দরিয়ার ডাক;
নতুন পানিতে সফর এবার হে মাঝি সিন্দাবাদ!
---------------
ঘন সন্দল কাফুরের বনে ঘোরে এ দিল বেহুঁশ
হাতীর দাঁতের সাঁজোয়া পরেছে শিলা দৃঢ় আবলুস,
পিপুল বনের ঝাঁঝালো হাওয়ায় চোখে যেন ঘুম নামে,
নামে নির্ভীক সিন্দু-ঈগল দরিয়ার হাম্মামে।
ধ্বনি-মাধুর্য ও উপস্থাপনার গাম্ভীর্যতায় উপরোক্ত পঙক্তিমালা বাংলা-কাব্যে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। বিষয় ও প্রতীকে কোন নতুনত্ব না-এনেও, নিরূপিত (inductive) রীতিতে নিতান্ত আটপৌড়ে শব্দের এমন সচেতন-সুদক্ষ ব্যবহার বাংলা-কাব্যে বিরল।
ফররুখের কাব্য-সাধনার মূলে যে দূরায়ত ঐতিহ্য ও স্বপ্ন-সন্ধানের ব্যাঘ্রতা তার শৈল্পিক বিকাশ ঘটেছে ‘সাত সাগরের মাঝি’-তে। আরবী-ফার্সি শব্দের ধ্বনির সাযুজ্যে নতুন কাব্য-ভাষা বিনির্মাণের এই প্রয়াস বাংলা কাব্যে একেবারে নতুন নয়। তাঁর আগে মোহিত লাল মজুমদার, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত হয়ে নজরুলে এই স্বতন্ত্র ধারার সৃষ্টি-সুখের-উল্লাস দেখা গেছে। এই ত্রিরত্নের মধ্যে আরবী-ফার্সি শব্দের ব্যবহারে নজরুল RHYM, RHYTHM, VERSE-এর আশ্চর্য সমন্বয়ে এক গ্রহণযোগ্য ধ্বনি-হিল্লোল সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে নজরুলে যেখানে ঐতিহ্যের এই আশ্রয়, পূতি-সাহিত্য থেকে ধারকৃত শব্দের ব্যবহার ছিলো প্রয়োজন ভিত্তিক, ফররুখে এই ধারার ভাব-ভাষা-আঙ্গিকের বিষয় ভিত্তিক ব্যবহার ছিলো সুস্পষ্ট। তিনি বার বার ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ অতল সমুদ্রে কিশতী ভাসিয়ে দিলেও তাঁর এ যাত্রা নিরুদ্দেশের ছিলনা। তাঁর তাজী ক্ষণিকের গাফলতে অজানা বন্দরে ভিড়লেও তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে ‘হেরার রাজ-তোরণ’। এখানেই ফররুখ কাব্যের বিশেষত্ব। এর জন্য তাঁকে সইতে হয়নি কম নিপীড়ন ও বঞ্চনা। বলা হয়েছে বাংলা-কাব্যের সুচিতা নষ্ট করেছেন তিনি। অথচ ঐতিহ্য-চেতনায় উদ্বুদ্ধ Islamic Revivalist, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের কবি ইকবালকে নিগৃহিত হতে হয়নি তাঁর স্বজাতির কাছে। ‘সারি জাহাঁ সে আইচ্ছা ইয়ে হিন্দুস্তাঁ হামারা’-র কবি নির্দ্বিধায় বলতে পেরেছিলেন –
চীন ও আরব হামারা, ইয়ে হিন্দুস্তাঁ হামারা
মুসলিম হে হাম, ওয়াতান হে সারি জাহাঁ হামারা
কিন্তু তাঁর (ইকবালের) কাব্যের সুকৃতি ও স্বীকৃতির ব্যাপারে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই আজো। মূলত বিশ্বাস ও স্বপ্ন থেকে পালিয়ে বেড়ানো প্রকৃত কবির পক্ষে দুরূহ কাজ। কবির একান্তে পথ চলার প্রতিটি মুহুর্তে ‘বিশ্বাস’ বার বার মূর্ত হয়ে উঠবেই; কখনো সঙ্গোপনে, কখনো প্রকাশের প্রচন্ডতায়। ঠাকুরের কবিতায় বিশ্বাসের প্রচন্ডতা নিম্নরূপঃ
আজ ধ্বজা করি উড়াইবো বৈরাগীর উত্তরি বসন
দরিদ্রের বল
এক-ধর্মরাজ্য হবে এ-ভারতে এ-মহা বচন
করিব সম্বল।
আর ফররুখ-কাব্যের বিস্তৃত ভূভাগ জুড়ে স্ববিশ্বাস প্রতিষ্ঠার আকাংখা চর্চিত হয়েছে অসামান্য দক্ষতায়। একই ছন্দ ও শব্দের পৌনঃপুনিক ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার না করেও বলা যায় যে-কোন কালোত্তীর্ণ কবির ন্যায় ধ্বনি ও শব্দের সুচতুর ব্যবহারে তাঁর বিশ্বাস ও স্বপ্নের কাব্যিক উপস্থাপনার শৈল্পিক সাফল্য সত্যি ঈর্ষণীয়। নিম্নের কবিতাংশগুলোই তার নিশ্চিত প্রমাণঃ
এ নয় জোছনা-নারিকেল শাখে স্বপ্নের মর্মর
এ নয় পরীর দেশের ঝরোকা নারঙী বন্দর
এবার তোমার রুদ্ধ কপাটে মানুষের হাহাকার,
ক্ষুধিত শিশুর কান্নায় শেষ সেতারের ঝংকার!
---------------
সওদাগরের দল মাঝে মোরা ওঠায়েছি আহাজারি,
ঘরে ঘরে ওঠে ক্রন্দন ধ্বনি আওয়াজ শুনছি তারি।
ওকি বাতাসের হাহাকার, - ওকি রোনাজারি ক্ষুধিতের
ওকি দরিয়ার গর্জন, - ওকি বেদনা মজলুমের!
ওকি ক্ষুধাতুর পাঁজরায় বাজে মৃত্যুর জয়ভেরী!
পাঞ্জেরী!
জাগো! বন্দরে কৈফিয়তের তীব্র ভ্রুকুটি হেরি
জাগো! অগণন ক্ষুধিত মুখের নীরব ভ্রুকুটি হেরি,
দেখ চেয়ে দেখ সূর্য ওঠার কত দেরী, কত দেরী!
--------------
সুরাত জামাল জওয়ানির ঠোঁটে বেকার নওজোয়ান
ভাবে জীবনের সব মধু লোটে কমজোর ভীরু প্রাণ
এ আশ্চর্য আমাদের কাছে! কিশতী ভাসায়ে স্রোতে
আমরা পেয়েছি নিত্য নতুন জীবনের তাজা ঘ্রাণ।
---------------
বুরাইর সাথে পেয়েছি ভালাই অফুরান জিন্দেগী
আবলুস ঘন আঁধারে পেখম খুলেছে রাতের শিখী
---------------
নিপুণ হাতের বলিষ্ঠ পেশী যদি পড়ে যায় ছিঁড়ে
তবে তুরন্ত বদলায়ে নাও হাত,
এক লহমার গাফলতে জেনো এই মৃত্যুর তীরে
ডোবাবে অতলে প্রবল ঝঞ্ঝাবাত।
----------------
কাবা-কেন্দ্রিক জীবনের এই পরিক্রমা
ক্লান্ত রাতের সংশয় মনে রেখোনা জমা
---------------
জীবনের চেয়ে দৃপ্ত মৃত্যু তখনি জানি
শহীদি রক্তে হেসে ওঠে যবে জিন্দেগানী
----------------
তবে পাল খোলো, তবে নোঙ্গর তোলো
এবার অনেক পথ শেষে সন্ধানী
হেরার তোরণ মিলবে সমুখে জানি!
তবে নোঙর তোলো,
তবে তুমি পাল খোলো,
তবে তুমি পাল খোলো।
তাঁর কীর্তির এখানে শেষ নয়। বাংলা-কাব্যে যে ক’টি কবিতা শিল্পোত্তীর্ণ হওয়ার দাবি রাখে তম্মধ্যে ফররুখের ‘ডাহুক’ অনন্য-অসাধারণ। সেই রোমান্টিক সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পাখিকে কবিকুল নিজ অবস্থা-প্রকাশের নির্ভরযোগ্য প্রতীক Apt Symbol বা Objective Correlative হিসেবে ব্যবহার করেছেন। কোলরিজ, শেলী, পো, স্টিভেন্স, কীটস এবং ইলিয়ট পাখি নিয়ে কবিতা লিখেছেন। শেলীর To a Skylark, কীটসের Ode to a Nightingale ইংরেজী ভাষার বিখ্যাত কবিতা। Ode to a Nightingale একক উত্তম পুরুষে উচ্চারিত ঝাঁঝালো রোমান্টিক-স্বাদের কবিতা, যার শুরু My heart aches এবং শেষ Do I wake or sleep দিয়ে। ফররুখের ‘ডাহুক’ শেলীর স্কাইলার্কের মতো গগনচুম্বী নয়, নয় কীটসের নাইটিঙ্গেলের মতো পলায়নবাদী, বরং স্রষ্টার সাধনায় ধ্যানমগ্ন, জিকিররত মর্ত্য-মাটির এক সাধারণ মানুষ। এটি এমন এক কবিতা, যার ভাব-ভাষা-চিত্রকল্প, নিমিষে যা পাঠক-মানসে সৃষ্টি করে আধ্যাত্মিক পরিবেশেরঃ
রাত্রিভর ডাহুকের ডাক---
এখানে ঘুমের পাড়া, স্তব্ধ দীঘি অতল সুপ্তির।
দীর্ঘ রাত্রি একা জেগে আছি।
বেতস লতার তারে থেকে থেকে বাজে আজ বাতাসের বীনা,
ক্রমে তাও থেমে যায়;
প্রাচীন অরণ্য তীরে চাঁদ নেমে যায়;
গাঢ়তর হ’ল অন্ধকার।
মুখোমুখি বসে আছি সব বেদনার
ছায়াচ্ছন্ন গভীর প্রহরে
রাত্রি ঝরে পড়ে
পাতায় শিশিরে---
জীবনের তীরে তীরে---
মরণের তীরে তীরে---
বেদনা নির্বাক।
সে নিবিড় আচ্ছন্ন তিমিরে
বুক চিরে, কোন ক্লান্ত কণ্ঠ ঘিরে দূর বনে ওঠে শুধু
তৃষাদীর্ণ ডাহুকের ডাক।
স্বভাবসিদ্ধ রীতির বাহিরে, একটিও আরবী-ফার্সি শব্দ ব্যবহার না-করেই অমর-সৃষ্টির কৃতিত্ব অর্জন করেছেন তিনি এই কবিতায়। কিন্তু নিরীক্ষাধর্মী, সৃজনশীল কবি ফররুখের কাছে কৃতিত্বের মোহ অবিশ্বাস্য রকমের কম ছিল।
১৯৪৩ ইংরেজীতে কলকাতার রাস্তায় রাস্তায় যখন ভুখা-নরকঙ্কালের মিছিল, ফররুখ আহমদের কলমে সেদিন স্ফূলিঙ্গ ঝরেছিল। লিখলেন সেই বিখ্যাত কবিতা – ‘লাশ’।
যেখানে প্রশস্ত পথ ঘুরে গেল মোড়
কালো পিচ-ঢালা রঙে লাগে নাই ধূলির আঁচড়
সেখানে পথের পাশে মুখ গুঁজে পড়ে আছে জমিনের পর;
সন্ধ্যার জনতা জানি কোন-দিন রাখেনা সে মৃতের খবর।
স্ফীতোদর বর্বর সভ্যতা
এ পাশবিকতা
শতাব্দীর ক্রুরতম এই অভিশাপ
বিষাইছে দিনের পৃথিবী;
রাত্রির আকাশ।
কার হাতে হাত দিয়ে নারী চলে কাম-সহচরী?
কোন সভ্যতার?
কার হাত অনায়াসে শিশু-কণ্ঠে হেনে যায় ছুরি?
কোন সভ্যতার?
পাঁজরার হাড় কেটে নৃত্য-সুর জেগে ওঠে কার?
শ্রমিকের রক্তপাতে পান-পাত্র রেঙে ওঠে কার?
কোন সভ্যতার?
হে জড় সভ্যতা!
মৃত সভ্যতার দাস স্ফীতমেদ শোষক সমাজ!
মানুষের অভিশাপ নিয়ে যাও আজ;
তারপর আসিলে সময়
বিশ্বময়
তোমার শৃংখলগত মাংসপিন্ডে পদাঘাত হানি
নিয়ে যাব জাহান্নাম দ্বার-প্রান্তে টানি;
আজ এই উৎপীড়িত মৃত্যু-দীর্ণ নিখিলের অভিশাপ বও
ধ্বংস হও,
তুমি ধ্বংস হও।
[লাশঃ সাত সাগরের মাঝি]
কিন্তু তিনি শুধু প্রতিবাদ ও দ্রোহকেই একজন বিদগ্ধ কবির কাব্য-সাফল্যের মানদন্ড হিসেবে মানতে চাননি, তাই আধুনিক জীবনের ক্ষয় ও যন্ত্রণার অবসান কল্পে তাঁর স্বজাতিকে এক সুমহান আদর্শের পথে ডেকেছেন। তা না-হ’লে ‘লাশ’ কবিতার কবির কাছে তাঁর সময়ে ভাব-বিশ্বাস-মূল্যবোধ বিরোধী যে হাওয়ার ক্রমশ মার্কসবাদী ঝড়ো হাওয়ায় রূপান্তর ঘটছিল, তার পুরোভাগে থাকা অস্বাভাবিক ছিলনা আদৌ। পরবর্তীতে যা হয়েছিলেন সুভাষ মুখোপাধ্যায় এবং বিষ্ণু দে। জনপ্রিয়।
তাঁরা জনপ্রিয় বা গণমানুষের কবি হতে পেরেছিলেন ঠিকই, কিন্তু মানুষের মুখের প্রতিবাদের ভাষাকে কবিতার ভাষায় রূপান্তরের নিমিত্ত কবিতায় ব্যবহৃত টেকনিক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছিল সমকালীনতার গন্ডিতে দায়বদ্ধ। কাব্যের ‘নান্দনিক ইটারনিটি’ প্রতিভাধর এই কবিদ্বয়ের কবিতায় অনুপস্থিত বলা চলে। এক্ষেত্রে চিন্তার সুদূর-প্রসারতা, এবং এর বাহন – ভাষা ও ধ্বনির বুদ্ধিবৃত্তিক প্রয়োগ ফররুখকে তথাকথিত প্রগতিশীলতার নিশানবরদার হ’তে দেয়নি, দেয়নি সমকালীন গ্রহণযোগ্যতা ও প্রতিপত্তি; তবে দেরীতে হ’লেও তাঁর কবিতাকে দিয়েছে কালোত্তীর্ণ হওয়ার দুর্লভ সম্মান। মধুসূদনের কাব্যরীতিও বাংলা কাব্যে অশ্রুতপূর্ব ছিলো। কেবল সমকালীনতায় বিশ্বাসী হ’লে রবীন্দ্রনাথও হ’তে পারতেন বড়জোর একজন, তাঁর অগ্রজ কবি, বিহারী লাল। এতদসত্তেও তাঁরা বড় কবি। নজরুলের ক্ষেত্রে যেমন শনির গোষ্ঠী, ফররুখের অকবি হওয়ার মূলে ছিল পেশাদার ‘সম্মেলনবাজ’ একটি দলের রাতা-রাতি কাব্যের মসনদ জবর-দখল করার দুর্দম অভিলাষ।
কেল্টিক পুরাতত্ত্ব, রূপকথা, পুরান ও কিংবদন্তীতে ইয়েটস যেমন এক বিচিত্র পৃথিবীর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন, তেমনি আধুনিক জীবনের কৃত্রিমতা-অসাড়তায় ক্ষুব্ধ ফররুখ আহমদ সিন্দাবাদের প্রতিকী আড়ালে, কয়েক ধাপ এগিয়ে, অতীত ঐতিহ্যের স্বর্ণালী দিনগুলোর ‘সৎ-সন্ধানে’ তাঁর কাব্য-সাধনাকে ব্যাপৃত করেছিলেন। ফররুখের কবিতা বুঝতে হ’লে তাঁর কবি সত্তাকে বুঝা প্রয়োজন। আর তাঁর কবি সত্তার পরিচয় মেলে নিচের কবিতাংশটিতে –
কাব্য নয়, গান নয়, শিল্প নয়, - শুধু সে মানুষ
নিঃস্বার্থ, ত্যাগী ও কর্মী, সেবাব্রতী – পারে যে জাগাতে
সমস্ত ঘুমন্ত প্রাণ, ঘুমঘোরে যখন বেহুঁশ
জ্বালাতে পারে যে আলো ঝড়-ক্ষুব্ধ অন্ধকার রাতে।
যার সাথে শুরু হয় পথ চলা জাগ্রত যাত্রীর
দিল সে ইশারা আজ আত্মত্যাগ হাতেম তা’য়ীর’
আদর্শের বিশ্বাসে নিঃশর্ত আত্মসমর্পনের কারণে তাঁর কবি-সত্তার বা তাঁর আমিত্বের বিলুপ্তি ঘটেছে হয়ত, নিশ্চিত তাঁর কবিতার নয়। তাঁর কবিতা তাঁরই হৃদয়ে লালিত সুমহান আদর্শের মতো যে-কোন কালের সমুদ্রে কিশতী ভাসিয়ে দেওয়ার প্রচন্ড শক্তি রাখে।