লেখাপড়া শেষে ছেলেটা আমার
বাড়ী হতে দূরে সে এক বিরাট চাকরি করে।
কত কত পাস দিল আমার ছেলে
গর্ভে আমার বুকটা ভরে ওঠে।
বড় বাড়িতে শহরে সে থাকে
কিনেছে, বিরাট এক গাড়ি।
গ্রামে আশায় তার বেশ অরুচি
আসেনা বহুদিন সে বাড়ি।
বলে, গ্রামে মানুষ থাকে?
যতসব নোংরা মানুষের বসবাস।
শিক্ষিত জ্ঞানী গুণী সব শহরেই থাক
আমরা মূর্খ করি কৃষিকাজ বারো মাস।
তারপর কিছুদিন পরে
ছেলেকে আমার দেখতে হলো সাধ।
রওনা হলাম শহরের দিকে
সাথে নিয়ে কত ফল আর পুকুরের বড় মাছ।
গিয়ে দেখি সে এক বিরাট বাড়ি
বাড়ির সামনে রয়েছে দুটি দারোয়ান।
আমাকে দেখে রেগেমেগে বলে
ভিতরে যাওয়া চলবে না ওখানেই দাঁড়ান।
যতই বলি এটা আমার ছেলের বাড়ি
কোন কিছুতেই আমাকে করে না বিশ্বাস।
তারপর দেখি ছেলেটা আমার আসছে গেটের দিকে
ছাড়লাম স্বস্তির নিঃশ্বাস।
তারপর কাছে এসে বলে
না বলে এসেছি তাই করেছি ভীষণ অন্যায়।
এমন হঠাৎ করে চলে এসে
ভিতরে যাওয়া নয়।
আরো কাছে এসে কানে কানে বলে
কাউকে বলো না তুমি আমার বাবা।
তোমার এসব ময়লা নোংরা জামাকাপড়
আমাদের সমাজে চলে না।
এসেছ যখন আজ থেকে যাও
এখন আমি খুব ব্যস্ত পরে হবে কথা।
বয়সের সাথে বিবেক-বুদ্ধি সব গিয়েছে
ভবিষ্যতে এমনটা করোনা।
আমি মূর্খ এতকিছু বুঝিনা
হঠাৎ বুক ফেটে এলো কান্না।
কতদিন পরে ছেলেকে দেখছি
তবু তাকে ছুঁয়ে দেখতে মানা।
কেঁদে কেঁদে বলেছি হে ঈশ্বর
এ কেমন বিচার তোমার?
মূর্খ চাষা আমি
এই কি দোষ আমার?
হাসিমুখে বলেছি আজ আর নয়
আমি গ্রামের মানুষ গ্রামেই ফিরে যায়।
আমি চললাম গ্রামের পথে
জ্ঞানীগুণী শিক্ষিত মানুষেরা শহরেই থাক।
ফুরিয়ে আসছে সময় আমার
মূল্যহীন এ সমাজে আমি।
তবুও বুক ভরে গর্ভ করেই বলি
ছেলেটা আমার সত্যিই শিক্ষিত আজি।