একটি কাব্যগ্রন্থের জন্ম
মণীষ
শহরতলির সরকারী হাসপাতালের লেবার রুম
একটা সদ্যোজাত কান্না
একটা কবিতার জন্ম।
শিশুর বাবা সেদিন কারখানার মেশিনে ব্যস্ত।
নামমাত্র মজুরীতে ওভার টাইম ।
নার্স দিদির বিরক্তি চোখেমুখে ,
"হাসপাতালে ফেলে দিয়ে যায়
কোন খোঁজ নেয় না "।
অসহায় বাপের বুকের ভেতর চাপা কষ্ট
একটি কবিতার জন্ম।
কচি মেয়েটি আজ পাঁচবছরের হল।
মুখেভাত হয়নি মেয়ের
সেটা বিলাসিতা মাত্র অভাবের সংসারে
মা ভাবছে আজ প্রথম জন্মদিন করবে ।
-মা আজকে মাছ করবে ?
কতদিন খাইনি।
-ঠিক আছে বাজারে চল।
কঙ্কালসার মুখে একটু খুশির ঝলক
একটি কবিতার জন্ম।
-দাদা কাটাপোনা কত করে ?
-চল্লিশ টাকা কিলো।
-একশো গ্রাম দিন না।
ব্যাপারী মুখ ব্যাঁকায়,
"একশো গ্রাম বেচি না"।
মায়ের মুখ অপমানে লাল।
একটি কবিতার জন্ম।
কারখানার মালিকের অফিসে
কাঁপা কাঁপা পায়ে মেয়েটাকে নিয়ে ঢোকে বিপিন।
বাবু একশোটা টাকা অ্যাডভান্স দেবেন ?
- কেন ?
মেয়ের মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য।
সামনের মাসের মাইনে থেকেই কেটে নেবেন।
অপরূপ দাস ফাইল থেকে চোখ তুললেন
একটা হাড় জিরজিরে মেয়ের মুখ
আশা নিরাশার মাঝে দুলছে।
শরীরে অপুষ্টির ছাপ স্পষ্ট
তাই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী বলে মনে হয় না
- একশোটাকা কেটে নিলে সারা মাস খাবে কী ?
ওভার টাইম করে কোনরকমে চালিয়ে নেব বাবু।
- মিত্র বাবু, বিপিনকে একশোটাকা দিয়ে দিন।
টাকাটা আমার খরচের খাতায় লিখে রাখুন।
এই দিন আমার বাবারও গেছে।
বিপিনের বুক ফেটে কান্না বেরোতে চায়।
একটি কবিতার জন্ম।
একটা ছোট ঘর।
ভেতরে ছটা চেয়ার
পাঁচটা জহুরী
একটা চেয়ার লিকলিকে মেয়েটির জন্য ।
অনেক রকম প্রশ্ন
অনেক চিন্তাভাবনার করে উত্তর।
শেষ প্রশ্ন, " আপনার হবি?"
একটা মৃদু হাসি চেপে যায় মেয়েটি
টানাপোড়েনের জীবনের আবার হবি ?
ধীর হাতে এগিয়ে দেয়
একটি মলিন খাতা।
প্রশ্নকর্তা একটিবার চোখ বোলালেন।
সাকুল্যে পাঁচটি কবিতা।
"ব্যস ! এই পাঁচটি মাত্র "
- হ্যাঁ স্যার আমার এটুকু জীবনের কাব্যগ্রন্থ।