ইংরেজীতে একটা কথা আছে Red Letter Day. বাংলায় তার মর্মার্থ ঠিক জানিনা । তবে আমার   একটি দিনের কথা মনে পড়ে ।  সেদিন হাতে প্রচুর সময় ছিল । বাংলা কবিতার একটি জনপ্রিয় ওয়েব সাইটের বর্তমান কালের কবিদের লেখা কবিতা পড়ছিলাম । পড়তে পড়তে হঠাৎই একটা কবিতায় এসে দাঁড়িয়ে যেতেই হল। কবিতার নাম 'দাগ'। কবি 'খাতুনে জান্নাত' । তখনও পর্যন্ত আমার কাছে অজানা অচেনা এক কবি ।

কবিতাটি সেদিন কম করে হলেও চল্লিশবার পড়েছি । আখমাড়াই কলের মতোই পিষে ফেলছিলাম কবিতাটি । এ এক অপূর্ব নতুন স্বাদ, অনন্য অনুভূতি। প্রতিটি শব্দে নেশা আছে । দাগ আমাকে গভীরভাবে দেগে দিয়ে গেল ।

একে একে কবির প্রায় শতাধিক কবিতা পড়ে ফেললাম । একটু একটু করে মনের ক্যানভাসে ফুটে উঠতে থাকে এক স্বভাবলাজুক কবির চিন্তা, চেতনা, আত্মনিমগ্নতা। কোথাও বা জীবনের প্রতি দ্বিধা-দ্বন্দ্ব । (" আগুনপোড়া হাত আগুন কিভাবে নেভায়!"- জীবনপাঠ )

কাব্যের পরতে পরতে খুলে যায় মানুষের চিরন্তন প্রেম ও যৌনতা । এখানে তাদের দেখি এক অনুপম  রূপে । এই সৌন্দর্য এক বিমূর্ত শিল্পকর্ম । উন্মাদনা আছে । পাশবিকতা নেই । এখানে আত্মবিশ্বাস ও স্বাধিকারবোধ নিজের নিজের সীমাবদ্ধতায় সচেতন । দান নেই ।সমর্পণ আছে । কেড়ে নেওয়া নেই । আমৃত্যু প্রতীক্ষা আছে ।
("উষ্ণতা বেয়ে উষ্ণতা উঠে যায়
কোষ কলায় সঞ্চারী ধারাপাত"... যুবতী জ্যোৎস্নায়)

আমি বামেও আছি, জিরাফেও আছি । কালচক্রে আছি। আছি  আবার নির্বাণেও । হ্যাঁ, ঠিক বলছি । এ পৃথিবীতে অধিকাংশ জীবন এভাবেই বয়ে চলে । তাই যখন কবি বলেন ,"গাছের ডালে ঝুলছে ঘুড়ি, চামচিকা
মিলে মিশে থাকে মুক্তি- বদ্ধতা"(কবিতা -ব্রীজ )- যেন সেই কালজয়ী সত্য পুনর্জন্ম নেয়।

যুগে যুগে দেখেছি  হৃদয়ের গভীরে সুপ্ত বিশ্বাস আর চেতনার চোখ দিয়ে  দেখা  নুতন নিষিক্ত  স্বপ্ন বিপ্লবের জন্ম দেয় । জন্ম দিতে গিয়ে দেখি আমাদের চোখের  আড়ালে কত স্বপ্ন  হয়েছে গতানুগতিক  হাঁসেদের চোখে মৃতবৎস্যা । বোঝে না লোকে  তবুও তো একটা সৎ  প্রচেষ্টা ছিল । তাদের প্রসববেদনা আজও মিথ্যে কথা বলে না । (সাংসারিক হাঁস গড়িয়ে গড়িয়ে হাসছে... ঠকবাজ)।

বিজ্ঞাপণ  বর্তমান সভ্যতায় যেন  উৎকর্ষের  বিচারের মাপকাঠি হয়ে উঠেছে । পেশাদার বিজ্ঞাপণদাতাদের সৌজন্যে অনেক সময়ই দেখা যাচ্ছে কাঁচের টুকরোয় হীরের চমক । এই প্রচার বিমুখ হীরে তাই জহুরীর নজরে আজও তেমনভাবে  পড়েনি। অবশ্য শুনেছি পরিবেশ দূষণ ও  ভিটামিন এ'র অভাবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জহুরীরা আজকাল আর  ঠিক করে আগের মতো দেখতে পান না ।

কবিতার মাঝে কখনো রক্ত মাংসের মানুষ  কবিকে  খুঁজতে চাওয়া  ঠিক নয় । প্রতিটি কবিতার পোশাকে সে ধরা দেয় নিত্যনতুন সাজে । কবিতার খাতা থেকে উঠে আসা কোনো প্রতিমূর্তি যার সাথে কোনো সামাজিক আটপৌরে সম্পর্কে বাঁধা পড়ে না গতানুগতিক জীবন ।

যে পাখী গাইছে পাতার আড়ালে বসে
কোনো উদাসী স্বপ্নাহত হৃদয়ের কথা
কখনো দেখিনি আমি চোখ তুলে
তার ভাঙা নীড়ে শ্রাবণের স্রোতধারা ।
পৌষালী কুয়াশার আবছা চাদরে ঢেকে
তবুও কী গভীরতম ভালোবেসে জীবনকে
ভোরের নিস্তব্ধ পৃথিবীতে রোজ সে
জাগিয়ে তোলে নতুন  প্রাণ ও বাঁচার  আশা ।