ঋণী পৃথিবী
-মানিক পাল
পৃথিবী, তুমি চেয়ে দেখ
তোমার অস্পৃশ্য লাশটি কোলে নিয়ে
বেচারা মানবতা কেঁদে চলেছে ভাগাড়ের ঐ কোনায়;
তার বিশাল বুকের ছাতির নিচে সে আঁকড়ে ধরে আছে
শকুনের ছোঁ থেকে বাঁচাতে তোমায় ।।
অতিমারী দানবের মৃত্যু যজ্ঞের উল্লাস ধ্বনিতে
চাপা পড়া তোমার যন্ত্রণার আর্তনাদ,
কাঁদিয়েছে বেচারা মানবতাকে
কিন্তু, একটু ও কাঁদতে পারে নি আমায়।।
তোমার আনুকূল্যে আজ আমি এক
অমানবিকতার মহিষাসুর;
কবিতার কলম কেড়ে নিয়ে তুমি
বানিয়েছ আমায় নিদারুণ নিষ্ঠুর ।।
ধর্ষণের হিংস্রতায় অর্ধনগ্না কিশোরীর
অবিকশিত স্তনের খাবলানো মাংসের গ্রাফিক্স
কাঁদতে পারে না এখন আর আমায় ;
ছিন্ন কামিজের উঁকিমারা উরুর চুইয়ে পড়া বিবর্ণ রক্তেও
নিষ্প্রাণ আমার চেতনা যন্ত্রের অচেতনতায়।
গাড়ি চাপা পড়া ভিখারির হাত চাইল সহায়তা
ক্যামেরা বন্দিতে দুর্লভ সিকোয়েন্সে আমার উল্লসিতা।
কে বাঁচুক কে মরুক আমার তাতে কি আসে যায়
শুধু ফেইসবুকে আমার স্টেটাসটি যেন ভাইরালের স্তূতি পায়।।
আজ আমার আসুরিক নিষ্ঠুরতা
ম্লান করে দেয় চেঙ্গিসের তলোয়ারকে ;
আমার আসুরিক বর্বরতা
লজ্জা দিতে পারে ইয়াহিয়ার নৃশংসতাকে।
শিক্ষায় আমার আসুরিক ঘৃণা
নিষ্প্রভ করে দেয় বখতিয়ারের নালন্দা দহন কে;
আমার পুঁজিবাদী আগ্রাসন লিপ্সা
ম্লান ও করে দিতে পারে ঘৃণ্য মার্কিনী ইতিহাস কে।।
বিশ্বাস কর, আমার বন্দুক একটু ও কাঁপে নি
চে গুয়েভারার বুক ছেঁদে দিতে ;
আমার বুলেট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি শেখ মুজিবকে কেড়ে নিতে।।
জাতি বিদ্বেষের ডিএনএ আমার
খুঁজে পাবে তুমি হিটলারের মৃত্যু শিবিরে;
বেহেস্ত প্রাপ্তির উন্মাদনার বীভৎসতায়
খুঁজে পাবে আমায় ধৰ্ম রক্ষার সাব-মেশিনগানে ।।
হাজার বছর পড়িয়েছ আমায়
কোরান গীতার পুণ্যি পাঠ;
শুনিয়েছ তুমি আমায়
গীর্জার ঘণ্টা, মন্দিরের উলু, ভোরের আজানের ডাক ।
শোনাও নি কখনো আমায় মানবতার মন্ত্র
শেখাও নি কখনো আমায় সভ্যতার ধর্ম
পড়াও নি কখনো আমায় মানবাধিকারের পবিত্র কিতাব
দেখাও নি কখনো আমায় নিষ্পেষণের ঘৃণ্য অবয়ব।।
তোমার শোষণের ঘৃণ্য প্রয়োজন
আমায় সাজিয়েছে সব মারণাস্ত্রের ঝংকারে,
আজ আমি আসন্ন মৃত্যুর ঘন্টা যেন শুনি
শোষিতের হুঙ্কারে।।
পৃথিবী , আমাতে ফলিয়েছ তুমি অমানবিকতার উর্বর ফসলে ;
আজ তাই তোমায় শোধ দিতে হবে - সুদ সহ সব আসলে।