"৭১এর সভ্যতা ধর্ষণের সাক্ষী আমি"
কবিতা লিখনে এবং আবৃত্তিতে : মানিক পাল
৭১এর সভ্যতা ধর্ষণের সাক্ষী আমি।
আদালতের ধর্মপুস্তকে হাত রেখে বলছি,
আমি যাহা বলিব সত্য বলিব,
সত্য ব্যতীত মিথ্যা বলিবনা।
পাক পাশবিক হিংস্রতার সাক্ষ্য আমি,
মুক্তিযুদ্ধের বীর গাঁথা ইতিহাসের সাক্ষ্য আমি,
মুক্তি পাগল জনতার বলিদানের সাক্ষ্য আমি,
শত্রু নিধনের সাক্ষ্য আমি,
স্বজাতীয় মিরজাফরীর সাক্ষ্য আমি,
ধর্ষিতার উরু চুইয়ে পড়া লাল রক্তের সাক্ষ্য আমি,
পড়শীর হাত বাড়ানো বন্ধুত্বের সাক্ষ্য আমি,
১৬ই ডিসেম্বরের বিজয় উল্লাসের সাক্ষ্য আমি,
আমি এখনো বেঁচে আছি।
ইতিহাসের বিবর্ণ ধ্বজা টি ধরে বেঁচে আছি।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কুঁকড়ে যাওয়া ফুলটি নিয়ে বেঁচে আছি।
আসন্ন প্রজন্মের কুঁড়িতে চেতনার ফুল ফোটাবো বলে বেঁচে আছি।
গণতন্ত্রের ভারী স্তম্ভগুলো আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি।
মৃত সহযোদ্ধার বুলেট ফুটো হেলমেটের ফাঁকে জন্মানো
ফুলের গাছটি বাঁচাবো বলে বেঁচে আছি।
দুর্ভাগ্য আমার - চারটি যুগ পেরিয়ে দেখি,
সযত্নে লালিত বেড়ে উঠা গাছটি আমার
বাংলা মায়ের শ্যামলিমা হীন মরুভূমির বিষাক্ত ক্যাকটাস।
ক্যাকটাসের চোখ আমার আত্মত্যাগের রক্তে লেখা কবিতাটিকে শাসিয়ে বলছে,
তোদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চোখে আমি কাঁটা বিঁধিয়ে দেব,
তোদের বীরগাথা ইতিহাসের পাতা বিবর্ণ করে দেব আমার বিষাক্ত নির্যাসে,
তোদের গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলোর প্রতিটি ফাটলে ভরিয়ে দেব আমার উপস্থিতি,
তোদের ধর্মনিরপেক্ষতার রাস্তা পিচ্ছিল করে দেব আমার জিজীবিষার পিচ্ছিলতায়।
আমার শত্রু নিধন স্বত্ত্বা আজ ভীত, ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত;
আমার কাপুরুষোচিত অসহায় চোখ তাকিয়ে দেখে
বিভ্রান্ত এক নব প্রজন্মের জন্ম বাংলা মায়ের জঠরে।
গণশত্রুরা মুক্তিযুদ্ধার ভুয়ো স্বীকৃত সনদে আজ বলীয়ান;
বীরাঙ্গনার আত্মত্যাগ সামাজিক উন্নাসিকতার তলে আজ ম্রিয়মান।
ধর্মীয় পুঁজিবাদের আস্ফালনে
ধর্মনিরপেক্ষতা যেন এক অপাংতেয় ধর্ষিতা রমণী।
সংখ্যালঘুর ভিটেয় লাগানো অগ্নি লেলিহান
আজ ধর্মরক্ষার মহোৎসবের যেন উচ্ছল একগুচ্ছ ধমনী।
অপভ্রংশতার ঘুনে ধরে বিজয়ের ত্রিমূর্তিটি ও যেন
আজ ভর করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা তাঁদের ছ'টি পায়ে,
মন্দির প্যাগোডা গীর্জা ধ্বংসের অপ্রতিহত অভ্যস্থতায়
আজ আমার পিতার ভাস্কর্য ও বিপন্ন প্রায়।