"একটু হাসি"

রাতের অন্ধকারে শহরটা তখনো জেগে ছিল। রাস্তার বাতিগুলো ম্লান হয়ে আসছিল কুয়াশার চাপে। একটা পুরনো কাঠের বেঞ্চে বসে ছিল অনিক, চোখে বিষণ্নতার ছায়া। শীতের বাতাস তার গায়ে কাঁপুনি ধরাচ্ছিল, কিন্তু সে নড়ল না।

পাশে বসা মেয়েটি ধীরে ধীরে হাসল। খুব হালকা, প্রায় শোনা যায় না এমন একটা হাসি। কিন্তু সেই হাসিতে ছিল কিছু অব্যক্ত কথা, যেন একটা গভীর অন্ধকার গহ্বর থেকে আলো বেরিয়ে আসছে।

অনিক তাকাল মেয়েটার দিকে। "তুমি হাসলে কেন?"

মেয়েটি চুপ করে রইল। কিছুক্ষণ পর বলল, "তুমি মরতে চাচ্ছিলে, তাই।"

অনিক বিস্মিত হলো। "তুমি জানলে কী করে?"

মেয়েটি এবার গভীরভাবে অনিকের চোখের দিকে তাকাল। "আমি জানি। কারণ আমিও একদিন মরতে চেয়েছিলাম।"

একটা দীর্ঘ নীরবতা নেমে এলো। হঠাৎ মেয়েটি একটা কাগজ এগিয়ে দিল।

"এটা রাখো।"

অনিক কাগজটা খুলল। তাতে একটা মাত্র লাইন লেখা ছিল—

"তোমার একটু হাসি, আমাকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়।"

অনিকের হাত কাঁপছিল। মেয়েটির হাসির রহস্য এবার সে বুঝল। হঠাৎ করেই মনে হলো, বেঁচে থাকাটা খুব বেশি কঠিন না। শুধু একটা হাসি দরকার। একটা সামান্য হাসি, যা কাউকে মৃত্যুর কিনার থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে।

সেই রাতে, অনিক প্রথমবারের মতো নিজে থেকেই হাসল।