কবি হতে এসেছি, নেতা হতে নয়
তোমরা যারা আজ কবিদের নেতা হবার খায়েশে-
ট্যা ট্যা ট্যা ট্যা করছো
দিনরাত রাবিশ সব শব্দদের পিঠে চড়ে চষে বেড়াচ্ছো ইন্টারনেটের এমাথা ওমাথা
তাদের বলছি
মহাকালের কসম তোমরা সূর্যের মুখোমুখি দাঁড়াও
যদি সূর্যের মুখোমুখি তাকিয়ে একটি শব্দ গলিয়ে দেখাতে পারো—
তবে আমার অমীমাংসিত কবিতার জোড়াতালি দেবো।
তোমাকে ঐ চন্দ্রের মুখোমুখি তাকিয়ে বলতে হবে কতটা স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে কবিকে ঘরছাড়া করে ওই নীল জোছনা।
তোমাকে বলতে হবে-
আকাশ জমিনে বসত করা ঐ নক্ষত্রকে কবি কেমন করে নন্দিনীর নাকফুলে বসিয়ে দেন।
আচ্ছা বলো তো এটা কী? সবুজ রং? হাহাহাহা-
ইউ বুল সিট!
এ আমার হৃদয় জুড়ে পতপত ওড়া পতাকার চারিধার
এ আমার মানচিত্রের রেখা
এ আমার দেশ।
কবি হতে এসেছি
তোমার মতো ধান্ধাবাজ নেতা হতে আসিনি
আচ্ছা বলো-
নদীর কুলকুল স্রোতে হাত চুবিয়ে কখনো কবিতার শব্দ ধরেছো কি?
কতটি শব্দ ধরে এনে কামিনীর কায়া জুড়ে একটি কবিতা সেঁটে দেয়া যায়?
বা কেওকারাডাঙের চূড়ায় বসে ছুঁয়েছো কি রংধনু রং?
নয়তো বলো শ্যাওলা ভরা ঐ বদ্ধ ডোবায় লাল পদ্মপাতায় সাথে ভেসেছো কি কখনো?
সন্ধ্যাবেলার রক্তিম আভায় স্নান করা মেঘের সারি দেখেছো?
গ্রীষ্মের খরায় ফেটে যাওয়া মাঠ?
বর্ষার টইটম্বুর নদী?
হেমন্তে কাটা ঘুড়ির পেছনে ছোটা ডানপিটে কিশোর?
সাদা কাশফুলের দোল খাওয়া শরতের বিকেল?
শীতের সকালে শিশির ভেজা দূর্বাঘাস?
কোকিলের কুহুতান শুনেছো বসন্তে?
আচ্ছা থাক।
এটুকু তো বলো কেমন করে শার্ল বোদলেয়ার রোমাঞ্চ-শব্দের জাদুতে মোহিত করতেন প্যারিসকে?
বা কবিতার ফিনিক্স পাখি আর্তুর র্যাঁবো মাতাল তরণী দিয়ে কেমন করে বশ করেছিলেন পল ভর্লেনকে?
বলো কেমন করে উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বা জীবনানন্দ দাশ শব্দদের উদোম গায়ে হাত বুলাতেন আলতো করে?
মোটামাথা উজবুক!
কবির বুকে ঘড়ঘড় করে চলা শব্দ ট্রেনের হুইসেল তোমার কানে পৌঁছায় না— আর তুমি কিনা শাসন করতে চাও মহাকালের যোদ্ধাদের!
তিনকদম পিছিয়ে দাঁড়াও,
তারপর মোড়ঘুরে পালাও সে ট্রেনের তলায় কাটা পড়ার আগে।
কবিদের নেতা নেই
যা আছে, যেটুকু আছে,
সেটা শুধু সত্যের কাছে পরম শ্রদ্ধায় অবনত মস্তক।
__________________________
রচনাকালঃ ০৫ জুলাই ২০১৯
চৌদ্দগ্রাম কুমিল্লা।