কবিতা—
ক্ষমা করো হে কবির অতলান্ত পাপ
শব্দ-সঙ্গমে লুটপাট হতে হতে
আনন্দাশ্রমে ক্ষমতসীন লম্পট ব্রাহ্মণের পাছায় লাথি মারতে গিয়ে
যে নিস্ফল যাত্রা করেছিল পতিত কবি
ক্ষমা করো হে তাকে।
কবিতা—
কতটা কান্না ছিল নগর জুড়ে
কতবার আলপথ মাড়িয়ে সুনশান পথে
উড়নচণ্ডী হয়ে খুঁজেছি শব্দের ফোয়ারা
কতবার নিজেকে ফালিফালি কেটে ক্ষুধা নিবারিত করেছি ক্ষুধার্ত জোছনার
আহা ক্ষুধা!
আমার চারপাশ জুড়ে তাথৈ তাথৈ নাচে সর্বগ্রাসী ক্ষুধা
কারবালার তৃষ্ণা লয়ে মরুর পথিক কবিকে তুমি ক্ষমা করো
এই দুর্দিনে আমি তোমার পরিপুষ্ট প্রেমিক হতে পারিনি।
আমি কতবার আগুন জ্বালতে গিয়ে ফিরে এসেছি
ভীষণ আগুন, বিষের আগুন
আহ্ কবিতা!
ডানায় আফিমের নেশা চড়িয়ে পুড়ছি মরণ খেলায়
কী নিখুঁত সুন্দর তুমি, আগুন সুন্দর, যেন মৃত্যু আমার...
তুমি জানো না...
আমি কতবার রাষ্ট্রের গলা টিপে দিতে গিয়ে ফিরে এসেছি আগুন হাতে
আহ্ আগুন! ভীষণ আগুন! আমি পুড়ে যাচ্ছি কবিতা! মৃত্যুর মতো সুন্দরে ঝলসে যাচ্ছি...
আমি কতবার গ্রাম শহর পাহাড় টিলায় ক্ষেত খামারে অজস্র শুয়োরদের ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড় করিয়ে বন্দুকের নল ফিরিয়ে নিয়েছি যমের বুকে
রাসায়নিক মরণ গ্যাসের মতো মৃত্যুর বীভৎস দুর্গন্ধ ছড়াতে চাইনি বলে আমি স্রষ্টা হতে পারিনি তোমার— আহা ক্ষমা করো হে আমার পাপ।
আরো কতবার—
সুশীলদের ধর্ষণ করতে গিয়ে ফিরে এসেছি তীব্র ঘৃণায়
একাধিক ধর্ষণ করতে গেলেই আমার বমি হয়— এসিড বমি— বমি করতে করতে আমি কঙ্কাল মমি হয়ে যাই
আমি কীসের জন্য বেঁচে থাকবো কবিতা?
আমি আমার নিজের মৃত্যু দেখে যেতে চাই তোমার রক্তে পা ভিজিয়ে অসীম সৌন্দর্যে!
ক্ষমা করো হে!
আমার বুকের ভেতর যারা বিষবৃক্ষ পুঁতে দিয়েছিল
মগজের ভেতর ঘনকালো অমাবস্যা সেঁটে দিয়েছিল
সারিন গ্যাসে আমি ওদের শ্বাসের উপর তোমায় লিখে দেবো— কসম মহাকালের।
তুলকালাম কান্ড ঘটে যাচ্ছে কবিতা
সবকিছু ভেঙে খানখান হয়ে যাচ্ছে...
একটা শৈল্পিক সুন্দর বিপ্লবের জন্য আমার হাঁটু ভেঙে পাঁজরের ভেতর সেঁধিয়ে যাচ্ছে, আমার আঙুলগুলো খসে যাচ্ছে, আমার চোখগুলো উড়ে যাচ্ছে, আমার কাগজ ভেঙে যাচ্ছে কলম গলে যাচ্ছে শব্দগুলো চারপাশে পাক খেতে খেতে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাস্তব হতে পরাবাস্তবে...
কবিতা—
সংক্রামক ব্যাধিতে পচে যাচ্ছে আমার মগজ
উহ্ আর পারছি না!
তোমার রজস্রাবে ভাসিয়ে নাও সেসব প্রেতায়িত আত্মা
আমাকে তোমার গর্ভে ঢুকে যেতে দাও...
তোমাকে সৃষ্টি করতে করতে বারবার বারবার আমি তোমারই গর্ভ হতে জন্ম নিতে চাই হে কবিতা...
জানি— তোমার চুরমার অন্ধকারে অকাট্য যন্ত্রণা
তোমার সকল যন্ত্রণা মিটিয়ে নেবো আমার ক্ষুধায়
আমি দেখতে পাচ্ছি গতরাতের তীব্র মৈথুনে
আমার কলম নিঃসৃত ঘনকালো বীর্য হতে
মিলিয়ন মিলিয়ন বিলিয়ন বিলিয়ন আলোকবর্ষ জুড়ে
আদি হতে অনাদির পথে
ঝাঁকেঝাঁকে কবিতা শিশু উড়ে যাচ্ছে তোমার স্তনযুগলের দিকে...
ওদের পথ দেখাও কবিতা
যে পথ কবির হস্ত চুম্বন করে কামাতুর চোখে
কবিকে প্রেমী করে তোলে
যে প্রেম-সঙ্গমে জন্ম নেয় বিন্দু সমাচার থেকে বিপ্লব— সমাজ— রাষ্ট্র— পৃথিবী— কাল মহাকাল...
এমনকি ঈশ্বর!
তোমাকে বুনতে বুনতে
আমিও যে কবি থেকে ঈশ্বর হয়ে উঠি।
♦
১১ জুলাই ২০২০
কুমিল্লা।